Hafizul Islam

এলিমেন্ট অব ন্যারাটিভের ভিত্তিতে ১টি বাংলা ও ১টি ইংলিশ সিনেমার বিশ্লেষণ

পড়েছেন: 28 জন পাঠক

চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী ও মিশ্র শিল্পমাধ্যম। সাহিত্য, সংগীত, আর্ট, ফটোগ্রাফি, নাট্যকলাসহ নানাধর্মী মৌলিক শিল্পের সমন্বয়ে তৈরী এই মাধ্যমটি সামাজিক ভূমিকা ও গণমানুষ বা ভোক্তাশ্রেণীর বিবেচনায় বেশিরভাগ মৌলিক শিল্পমাধ্যমকে ছাপিয়ে গেছে। চলচ্চিত্রকে তূলনামূলক ও সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করার বিষয়টি সবসময়ই কিছুটা জটিল।

তাই, দুটি চলচ্চিত্রের তূলনামূলক ও সমালোচনামূলক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন পরস্পর সম্পর্কিত চলক বা ভ্যারিয়েবলের সহায়তা নিয়ে থাকি। চলচ্চিত্রবিষয়ক তত্ত্বের উপর নির্ভর করার পাশাপাশি সরাসরি চলচ্চিত্রের গুণাগণ বিচার করেও কাঙিক্ষত বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

এখানে আমি এলিমেন্ট অব ন্যারাটিভ বা বর্ণনামূলক উপাদানের ভিত্তিতে একটি বাংলা এবং একটি ইংলিশ চলচ্চিত্রের মধ্যে তূলনামূলক ও সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। দু’টি চলচ্চিত্রের সাদৃশ্য, বৈসাদৃশ্য, ধরণ, পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়গুলো ন্যারাটিভের উপাদানের আলোকে বুঝতে চেয়েছি।

চিত্রনির্মাণ-অঙ্গনে একটি বিখ্যাত উক্তি আছে: ‘পৃথিবীর সমস্ত গল্প সর্বমোট আটটি প্লটের উপর ভিত্তি করে নির্মিত’। এই ভাবনাটিকে সত্য বলে ধরে নিলে আমাদের প্রশ্ন জাগে, চিত্রনির্মাতারা একই রকমের প্লট নিয়ে কাজ করেন। তাহলে, নাটকীয়ভাবে প্রতিটি চলচ্চিত্রে ভিন্নতা আসে কীভাবে?

আসলে, নির্মাতারা অভিন্ন উৎস ও উপাদান নিয়ে কাজ করলেও চলচ্চিত্রগুলোর থিম, ভিজ্যুয়াল, সংলাপ, চরিত্রের মিথস্ক্রিয়া, স্থান, কাল, পাত্র, ভৌগলিক অবস্থান, সামাজিক শ্রেণী ইত্যাদি আরো নানা প্রভাবকের কারণে শেষপর্যন্ত প্রতিটি চলচ্চিত্র অন্যন্য হয়ে উঠে।

সিনেমার সেটিংস কেবল তারিখ, শহর বা দেশকেই প্রতিষ্ঠিত করে না। পাশাপাশি তাদের বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক, শিক্ষামূলক এবং সাংস্কৃতিক পটভূমি এবং অন্যান্য সনাক্তকারী উপাদানগুলি সনাক্ত ও তুলে ধরতে সাহায্য করে।

বাংলা চলচ্চিত্র ‘প্রেম প্রেম পাগলামি’ ২০১৩ সালে মুক্তি পায়। সাফি উদ্দীন সাফি পরিচালিত চলচ্চিত্রটি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ নায়ক ও নায়িকার নাটকীয় প্রেম ও তার পরিণতি নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। একটি উচ্চবিত্ত পরিবারের বসার ঘরে, একজন বাবা ও তার সন্তানের মধ্যে পাঠদান এবং ‘শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ বিষয়ক আলাপ মুভির ওপেনিং সিন।

মুভিটি একটি শহরের কিছু স্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দৃশ্যায়িত হয়েছে। বেশিরভাগ আউটডোর সিনগুলো নেয়া হয়েছে দিনের আলোতে এবং নিয়ন্ত্রিত শুটিং পরিবেশে। কস্টিউম ও এক্সেসরিজের ব্যবহারে বুঝানোর চেষ্টা করে হয়েছে, সিনেমার মূল চরিত্রেরা সমাজের ধনিক শ্রেণীর।

ইংলিশ চলচ্চিত্র ‘টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান’ ১৯৫৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল। মুভিটি পরিচালনা করেছিলেন সিডনি লুমেট। কোর্টরুম ঘরানার এই চলচ্চিত্রটিতে দেখা যায়, একজন যুবক তার পিতাকে হত্যার জন্য বিচারের মুখোমুখি। সমস্ত দলিল-প্রমাণ যুবকটির বিরুদ্ধে। ১১ বনাম ১ দিয়ে জুরি বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হয়। ১১ জন জুরি মনে করেন ছেলেটি দোষী। আর, ১ জন মনে করেন ছেলেটি দোষী বা নির্দোষ যাই হোক না কেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা উচিত।

মুভিটির ওপেনিং শটটি একটি দারুন অনুষঙ্গ। নিও-ক্ল্যাসিকাল কোর্ট হাউসের লো-অ্যাঙ্গেল শটে একটি গণতান্ত্রিক বিচারিক কক্ষকে দেখানো হয়। স্ক্রিণে তখন বোল্ড রোমান লেটারে চলচ্চিত্রের নাম দেখা যায়। ক্যামেরা ঘুরে ঘুরে বিচারের মঞ্চটি দেখায়। বিচারকেরা সিনে প্রবেশ করেন।

৯৬ মিনিট দৈর্ঘ্যের সিনেমাটির প্রায় ৯৩ মিনিট একটি নির্দিষ্ট কক্ষের ভেতর দৃশ্যায়ন করা। সিনেমাটিতে কক্ষটিকে শক্তিশালী একধরণের এলিমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করেছেন পরিচালক। একইসাথে রুমের ফ্যান, জানালা, টেবিল, চেয়ার, চুরুটদানি সবকিছু সমান দক্ষতায় অংশ নিয়েছে অন্যন্য এই সিনেমার ভিত তৈরীতে।

Leave a Comment