Hafizul Islam

অতিরিক্ত অপশন আমাদেরকে অসুখী করে?

পড়েছেন: 67 জন পাঠক

ঈদের জামা নিয়ে আমি একরকম অদ্ভূত ঝামেলায় পড়তাম শৈশবে। জামা কিনে আনার ২/১ দিন পর আমার মনে হতো, এই জামাটার চেয়ে দোকানের শেলফের অন্য জামাটা সুন্দর ছিলো। কিংবা, পাশের দোকানের হ্যাঙ্গারে ঝুলতে থাকা জামার রঙটা বেশি জোশ। এই ভাবনাটা নিজের মাথায় রাখতে পারলে সমস্যা ছিলো না।

ভেজালটা হতো তখন যখন আমি মা-বাবাকেও আমার অহেতুক গন্ডগোলে অংশ নেয়াতাম। মা বলতেন, আরে এইটাই তো ভালো, সুন্দর। আমার মনে হতো, মা ঠিক বলছেন না। পরে অবশ্য আমাদের আর্থিক সামর্থ্য ও জামা বদলে নেয়ার পদ্ধতি সহজ না হওয়াতে নিজের কেনা জামাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হতো।

এতোদিন পর এসে মনে হয়, অপশন থাকার কারণে তখন মনের শান্তি নষ্ট হতো। এই যে একটা রেখে আরেকটা, সেটার বদলে অন্যটাকে গ্রহণের অহেতুক প্রবণতা আমার চারপাশে নিয়মিতই দেখেছি। কখনো বেখেয়ালে নিজেও একই অভ্যাস করেছি।

এই প্রবণতাকে এখন পরিত্যাজ্য মনে করি। আমাদের মা-বাবা কিংবা শুভাকাঙিক্ষরা আমাদের ভালোবাসেন বলেই তারা আমাদেরকে অনেক অপশন দিতে চান। হয়তো কখনো কোন কোন ক্ষেত্রে অপশন থাকাটা যুক্তিযুক্ত। তবে, সবসময় নয়।

ছোটবেলা থেকে হোস্টেলে বেড়ে ওঠার কারণে একটা বিষয় স্বভাবের মধ্যে বিল্টইন হয়ে গেছে। খুব বেশি অপশন চিন্তার সুযোগ, নিজেকে কখনো না দেয়া। হোস্টেলে আমাদের কাছে অপশন থাকতো না বললেই চলে। যেমন, যে মাছ রান্না হয়েছে রাতের খাবারের জন্য, সেটার চেহারা দেখলে ক্ষুধা নাই হয়ে যায়। কিন্তু, কিছুই করার নেই। এটা ছাড়া আর কিছু মিলবে না খাওয়ার।

তখন, উপায় খুঁজতাম, কীভাবে এই বিচ্ছিরি মাছকে কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে খাওয়ার উপযুক্ত করা যায়। পেয়াজ-মরিচ দিয়ে মাছ ভর্তা করতাম। কখনো আলুর সাথে মিশিয়ে নিতাম। অপশন না রাখার এই অভ্যাসটা দিনে দিনে এমন লেভেলে গিয়েছে যে, কিছুতেই কিছু যায় আসে না।

আপনি যখন এটার পরিবর্তে ওটা, সেটার বদলে আরেকটা পেয়ে যেতে থাকবেন, তখন আপনার চাহিদার মাত্রাটা অন্যরকম হবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটার পরিবর্তে আরেকটা পছন্দের প্রবণতা তৈরী হতে থাকবে। এই অভ্যাস আপনাকে কখনো শান্তিতে থাকতে দিবে না। সবসময় মনে হবে, এরচে ভালো কিছু কোথায় পাবো। এরচে ভালো কীভাবে হবে। এই চাহিদার কোন সীমা নেই। অতিরিক্ত অপশন আমাদেরকে কেবল অসুখী করে।

আপনি নিজে যেরকম আচরণ পেতে পছন্দ করেন, খেয়াল করে দেখবেন যে, আপনি অন্যদের সাথে সেরকম সুন্দর আচরণ করছেন তো? কারো মানসিক অবস্থা আপনি বুঝতে নাও পারেন। এটা কোন বিষয় না। না বুঝে সেই ব্যক্তিকে নিজের মতো ব্যাখ্যা না করাটাই উচিত।

জাজমেন্টাল হওয়া বা কাউকে খুব সহজে বিচার করে ফেলার কোন অধিকার আমাদের নেই। নিজের যা আছে, যতোটুকু আছে, সেটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার বিদ্যেটা শিখে নিতে পারাটাই সফলতা।

দিনের পর দিন আপনার ব্যক্তিগত হতাশা-রাগ-ক্ষোভ, আপনার কাছের মানুষদের মনের উপর ভয়াবহ চাপ তৈরী করতে পারে। এই পরোক্ষ চাপ ভীষণ ক্ষতিকর। নিজে যতোটুকু পারছেন, যেভাবে জীবন চলছে, সেটা নিয়ে সবসময় আফসোস করার কিছু নেই।

এই লেখাটি পড়তে পারছেন মানে, আপনার মৌলিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে। তাই, কৃতজ্ঞ হোন। আপনি শান্তিতে থাকলে আপনার চারপাশে শান্তিই বিরাজ করবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, জীবনের সবক্ষেত্রে নিজেকে অতিরিক্ত অপশন দিয়ে রাখা অনুচিত।

আমরা হয়তো আজকাল তাই সহজেই অসুখী হই! বিকল্প চাহিদার আটসাঁট বাক্সে নিজেকে বন্দি না রেখে সহজে সুখি হওয়ার অভ্যাসতো করাই যায়!

Leave a Comment