Hafizul Islam

ইতি অবন্তিকা কিংবা নিজের জন্য লেখা কৈফিয়ত

পড়েছেন: 17 জন পাঠক

“ভাই, মেয়েটার নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা আছে। ভিতরে ভিতরে কিছু হইছে। সামলাইতে পারে নাই। আ ত্ম হ ত্যা করছে। ম রে গেছে দেখে এখন ছেলেটা ফাঁসছে। খোঁজ নিয়া দ্যাখেন, কী কী বাইর হয়।”

এটা ছিলো আজকে একজনের কাছ থেকে শোনা ডায়লগ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা। উপরের মন্তব্য তাকে নিয়েই করা। অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় আমি একরকম নির্বিকার হয়ে আছি।

সংবাদমাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে দেখছি, মানুষের দুর্ভাগ্য, কান্না, হতাশা কীভাবে আমাদের হাতে পণ্য হয়ে ওঠে। অবন্তিকা কেনো চলে যাওয়াটাকে বেছে নিলেন, কেনো পারলেন না টিকে থাকতে, কেনো তাকে যেতেই হলো, এইসবের পেছনের রহস্য খুঁজে খুঁচে বের করছি সবাই।

কিন্তু, একটা জ্বলজ্যান্ত উচ্ছ্বল মানুষের হঠাৎ হারায়া যাওয়ার আকাশসমান বেদনা অনুমান করা, তারজন্য খানিকটা সহানুভূতি ধরে রাখার কোনো আগ্রহ নাই আমাদের!

আপনার কাছে সু ই সা ই ড করা গ্রহণযোগ্য না হতেই পারে। কিন্তু, এমন সিদ্ধান্ত কেউ নিলে, দয়া করে এটা বলতে আসবেন না, খুব তুচ্ছ কারণে মরে গেলো। আবার দেখুন, একজন নারী তার সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ এভাবে করেছে, সেটা আপনার চোখে লাগছে। মনে হচ্ছে, মেয়েটা খুব খোলামেলা, মিশুক ছিলো। নিশ্চয়ই চরিত্র ভালো ছিলো না।

আরে ভাই, থামা যায় না একটু? কয়েক বছর আগের ঘটনা এতোদিন পর বললো কেনো, আগে বলে নাই কেনো, এমন করলো কেনো এইসব বলার আগে একটু থামেন। আপনি তাকে বলতে দিয়েছেন? তার সহপাঠীর কাছেইতো সে অনিরাপদ। অভিভাবক সমকক্ষ শিক্ষকের কাছে সে অনিরাপদ। গলা তুলে চিৎকার করলেও কোথাও তার আওয়াজ আপনি পৌঁছতে দেননি।

এখন সে আ ত্ম হ ত্যার মধ্য দিয়ে সবচেয়ে উচ্চস্বরে জানান দিলো, অবন্তিকার সাথে অন্যায় হয়েছে।

হুম, হতে পারে ঘটনা আপনার দৃষ্টিতে সরল না। এটা আপনি ভাবতেই পারেন, এর পেছনে অবন্তিকা নিজেই দায়ী। সেক্ষেত্রে অপেক্ষা করেন। নারী বলেই চরিত্রে প্রশ্নবোধক ব্যবহারের আগে সময় নিন। ভালো করে বুঝে জেনে তারপর মন্তব্য করুন।

কিন্তু, দয়া করে ‘নিজের ফুটফুটে ফুলের মতো পবিত্র চরিত্রে’র (!?) উপর নির্ভর করে কাউকে অপরাধী বিচার করে দিয়েন না।

গতবছর কাছাকাছি সময় আমার এক কলিগ সু ই সা ই ড করেছিলেন। কিছুদিন আগে গেলেন সাদী মহম্মদ। এই যাওয়ার মিছিলটা ক্রমাগত দীর্ঘ হতে থেকেছে। প্রতিটি এমন চলে যাওয়া আমাকে স্তব্ধ করে। আমি আরেকটু করে ছোট হয়ে যাই, হারানো মানুষগুলোর চিৎকার শুনতে পাইনি বলে।

অবন্তিকা যে অন্যায়ের জন্য প্রতিবাদ করে গেলেন, এরকম অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠুক। এমন আরো অবন্তিকারা আছে, যাদের সাথে ঘটা বীভৎস অপরাধের বিরুদ্ধে কোনো শব্দই তারা করতে পারছেন না। তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। তাদের হয়ে নিজের কণ্ঠে চিৎকার করি।

এই ফেসবুক স্ট্যাটাস কিংবা লিখে রাখার কষ্টটা শুধু নিজের মানসিক দায়মুক্তির তাড়না থেকেই হয়তো করছি। তবুও, লিখে রাখি।

জীবনের আসলে কোনো মানে নেই। স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকারের পক্ষে আমার অবস্থান। তবে, সেটা হোক সত্যিকার অর্থে নিজের ইচ্ছায়। আমি অবন্তিকার পাশে আছি। হোক, আপনার দৃষ্টিতে অবন্তিকা মন্দ নারী কিংবা খারাপ মেয়ে।

আমার আশা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শুধু সার্টিফিকেট না ছাপিয়ে কিছু হলেও মানুষ বানাক। শিরদাঁড়া সোজা কিছু মানুষ তৈরি হোক। কিছু লোকজন গলার রগ ফুলিয়ে আওয়াজ তুলতে শিখুক।

Leave a Comment