Hafizul Islam

শোকবার্তা; একজন নোবেল বিজয়ী বাঙালির অন্তর্ধান

পড়েছেন: 558 জন পাঠক

I never prayed for heaven coz in heaven all the interesting people are missing.

আমি ইংরেজী মোটেও পছন্দ করি না। তবুও, আজকে শুরু করলাম ইংরেজী দিয়েই। আমি আজকে একটি পোস্ট লিখবো। যে পোস্টটি কখনো লিখতে হবে বলে ভাবিনি। আমি একজন নোবেল বিজয়ী বাঙালিকে নিয়ে পোস্ট লিখছি। প্রিয় পাঠক, আপনি নিশ্চয়ই এতোক্ষণে ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন, কাকে নিয়ে আমার এই পোস্ট।

আমি আজকে লিখবো একটি ঐতিহাসিক পোস্ট। আচ্ছা, কেউ বলতে পারেন, অসামান্য কোন সাফল্যের আনন্দটা ঠিক কেমন হয়ে থাকে? ইট-কাঠ-পাথরের এই ঢাকা শহর প্রায় চারশ বছরের বয়োবৃদ্ধ এক কালের সাক্ষী। ইতিহাসের পাতায় অসংখ্য উত্থান আর পতনের কাহিনী এই শহরের পুরোণো অন্ধকার অলিগলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

আমি যখন আহসান মঞ্জিলের সামনে দিয়ে জনাকীর্ন রাস্তা পেরিয়ে হেঁটে যাই , তখন মনের কোণে অন্যরকম সব চিন্তারা এসে ভিড় জমায়।

মনে হয়, এই সেই নবাব বাড়ি যেখানে ছিলো ঢাকার শেষ নবাবদের জলসাঘর। এই সেই প্রাসাদ, যেখানে গ্রীষ্মের তারাজ্বলা রাতে নাঁচের আসর বসতো। রাজকীয় কোন সুন্দরীর পায়ের নুপুরের ণিক্কন কাঁপন তোলতো এইখানের বাতাসে। কতো অন্যায়, স্বেচ্ছাচারিতা, কতো সুবিচার আর কল্যানের ধারা পাশাপাশি বয়ে যাওয়ার বৈচিত্র্যময় কথকতা মিশে আছে এই প্রাসাদের প্রতিটি অনুষঙ্গে । অগণিত ভালোবাসা কিংবা বিচ্ছেদের ট্রাজেডি নিশ্চয়ই এখানের দেয়ালগুলো এখনো মনে রেখেছে।

আমার মনে হতে থাকে, এই হয়তো নবাবের পেয়াদা এসে আমায় পাকড়াও করলো। নবাবের প্রাসাদের সামনে দিয়ে মাথা উঁচু করে হেঁটে গেছি বলে। আমি ভাবি..। আমার ভাবনার কোন সমাপ্তি আমি খুঁজে পাই না। আমি তাজমহলের মতো স্থাপত্যের এবং একইসাথে সবার ব্যাখ্যা অনুযায়ী ভালোবাসার নিদর্শন দেখেও চমৎকৃত হবার চেয়ে ভাবিত হই অনেক বেশি। কতো মানুষের অক্লান্ত শ্রমে আর ঘামে এই কালের কপোলতলে একটুকরো মুক্ত গড়ে গিয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান!

কোথায় এখন তিনি? প্রিয়তমা মমতাজকে কি এখনো তিনি আগের মতোই ভালোবাসেন? এখনো কি তিনি আরেকটি স্বর্গীয় তাজ নির্মাণের কথা ভাবেন?

আপনারা হয়তো পোস্টটি আর পড়তে চাইছেন না। বিরক্ত বোধ করছেন। ভাবছেন, ধান ভানতে শীবের গীত গাইছি!! তারা আরেকটি থাকুন।

না, আমি লিখবো সেই নোবল বিজয়ী বাঙালীর কথা। যিনি আমাকে যন্ত্রমানুষ প্রমাণ করে দিয়ে গছেন। তাকেও আমি মনে রাখবো। ঢাকা যেমন ভুলেনি তার চারশ বচরের ইতিহাস। আমি থাকে মনে রখাবো আজীবন। কারণ, সে যে আমার ভাই। আমি আজকে সন্ধ্যায়ই জানতে পেরেছি, আমি আসলে একটি যন্ত্রমানব।

আমি যার কথা বলছি, তিনি নোবলে পেয়েছেন খুবই সম্প্রতি। খবরটা মিডিয়াতে আসেনি এখনো। কারণ, তার নোবেলের কোন ঘোষনা নোবেল কমিটি কখনো দেয়ইনি। আমি বলছি, আমার এক ব্লগবন্ধুর কথা। যিনি গতকাল নোবেল পেয়েছেন।

তবে, তিনি এখন অনেক দুরের এক পৃথিবীতে। যেখানের রাস্তায় কখনোই জ্যাম লাগেনা। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অস্থির হতে হয়না কাউকে। পরম শান্তিতে সবাই বসত করে সেখানে। আমার বন্ধুটি এখন না ফেরার দেশে।

আচ্ছা দোস্ত, তুই কি দেখতে পাচ্ছিস, তোর জন্য আমার এই এলিজি লেখার অপচেষ্টা? তোর কি এখনও আগের মতো কষ্ট হয়? আমি আজ সারারাত ভুতের মতো বসে ছিলাম। একফোটা পানিও রোচেনি। বন্ধু আমার, আগে তোর খেতে কষ্ট হতো। খেতে পারতিস না। এখনো কি তোর সেরকম কষ্ট হয়? সুযোগের অভাবে তুই চরিত্রবান, তুই বলতিস। এখন তো নিশ্চয়ই তোর অবারিত সুযোগ। এখনো কি তোর চরিত্র আগের মতো মুখচোরাই আছে? তোকে নিয়ে লিখতে গিয়ে কেনো যেনো খুব কষ্ট হচ্ছে।

আমি শেষ কবে কেঁদেছিলাম ভুলে গেছি। আজকে আমার চোখের কি যেনো হয়েছে। বারবার স্ক্রীণটা ঝাপসা হয়ে আসছে। আমরা দুশ্চিন্তা করবো বলে তুই আমাদের কখনো জানাসনি, কতোবড়ো একটি মরণব্যাধি সাথে নিয়ে তুই বেঁচে থাকছিস। কারো কাছে হাত পাততে ভালো লাগবে না বলে, তুই কাউকেই জানাসনি তোর অসুস্থতার কথা।

তোর মতো আড্ডাবাজ, বন্ধুপাগল স্বপ্নশীল খেয়ালি মনের মানুষগুলো, কেনো এভাবে চলে যাবে? আর কোনদিন ইসমাইল টিপু লিখবে না বিল গেটসের সাথে তার একান্ত আলাপনের গল্প! কখনো সে আর রকিং মুডে থাকার পরামর্শ দেবে না কউকে।

এভাবে ফাঁকি দিতে হয় কখনো বন্ধু? প্রিয় পাঠক, আমার এই বন্ধুটি প্রায়ই বলতো টিপু সুলতানের কথা। ওর খুব পছন্দের একটা উক্তি ছিলো এরকম, “সূর্য আমি। ঐ দিগন্তে হারাবো। অস্তমিত হব, তবু ধরণীর তলে চিহ্ন রেখে যাব।” এভাবে কারো মনে দাগ ফেলে চলে যেতে হয়না টিপু। ও বলতো, “বিপ্লবীদের বেশি দিন বাঁচা ঠিক নয়। বেশি বাঁচলেই তারা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। ” এ’জন্যই কি অভিমানী বন্ধুটি কাউকে কিছু জানালো না? আমার এই বন্ধুটি নিজের অসুস্ততার কথা গোপন রেখে তার অসুখ দুরারোগ্য মরণব্যাধি ক্যানসারের ভয়াবহতা নিয়ে সামুতে পোস্ট লিখেছিলো। অম্লান অকুন্ঠতায় চেপে গিয়েছিলো নিজের অসুস্থতার কথা। আমরা কেউ বুঝতেও পারিনি, ও অসুস্থ ছিলো।

ওর লেখা সেই পোস্টটি প্রকাশিত হয়েছিলো ০১ লা জুন, ২০১১ রাত ৩:৪২। অথচ, প্রথম মন্তব্য পড়ে ২৪ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৪২টায়।

আমাদের চোখ এড়িয়ে গেছে। আমি একজন অমানুষ, একথা এখন একটি প্রমাণিত সত্য। না হলে, আমি কেনো আজ ওর জন্য কষ্ট পাবার অভিনয় করছি। কেনো অযথা আমার চোখ থেকে অশ্রুকণারা গড়িয়ে পড়ছে অবিরল ধারায়? আমি কি কিছু করতে পেরেছিলাম? কিচ্ছু করতে পারি নি। আমি যদি সত্যি মানুষ হতাম, তাহলে আমার অর্ধেক জীবন দিয়ে হলেও নিশ্চয়ই আমরা দুজনে এখন একসাথে বসে লিখতাম কোন ব্লগপোস্ট। আমরা পারিনি ওকে ধরে রাখতে। ও চলে গেছে। আমাদের সব কদর্যতার বাইরে..। সব অপূর্ণতার উর্ধ্বে। আর কখনো ও মৃত্য যন্ত্রণায় ছটফট করবে না। রাতের পর রাত কষ্টের সুতীব্র দাহনে জ্বলবে না আমার বন্ধুটি।

ও চলে গেছে। আমাদের ফেলে গেছে জঞ্জালে ভরা জনারেণ্যের এই মেগাসিটি ঢাকাতে। আমার বন্ধুটির নিকনেম ছিলো নোবলেজয়ী টিপু। এই জীবনে ওর আর নোবলে পাওয়া হলো না। কিন্ত, সৃষ্টিকর্তা অবিবেচক নন মোটেও। মহান স্রষ্টা ওর জন্য নোবেল প্রাইজ বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। তাই, আজকে আমরা অসংখ্য ব্লগার বন্ধুরা সেই আনন্দ সেলিব্রেট করবো। কি আনন্দ ! না, টিপু আমার কোন বন্ধু কিংবা স্বজন নয়। ও ছিলো আমার অনলাইন বন্ধু। যুক্তিবাদী মানুষের কাছে ও একটা স্রেফ ভার্চুয়াল ইমেজ। কিন্তু, খবরটা পরার পর কেনো যেনো মনে হলো, এই ছেলেটা আমার গতজন্মে হারয়ে যাওয়া ভাই। খুব কস্ট হচ্ছে।

এখন আমার ঘড়িতে রাত ৪:০৫ মিনিট। একটু পরে আরেকটি নতুন দিন শুরু হবে। টিপুর মৃত্যুর দিনটি আরেকটু পুরোনো হবে। আমরা একসময় ভুলে যাবো টিপুকে। আমরা সবসময় ভুলে যাই। আমরা ভুলে গেছি আমাদের জীবনের অসংখ্য ট্রাজেডি। টিপুকেও ভুলে যাবো আমরা চিরায়ত প্রাত্যহিক ব্যস্ততায়। টিপু কি আমাদের ভুলতে পারবে? ও যেখানে থাকবে, সেখানে নিশ্চয়ই ব্লগ নেই। ফেসবুক নেই। তাহলে কিভাবে ওর সময় কাটবে? আমাদের কথা নিশ্চয়ই ওর খুব মনে পড়বে। আমাদের খুব ভালোবাসতো বোকা ছেলেটা। টিপু, আমি তোকে ভুলবো না রে। অনেক কষ্ট হচ্ছে বন্ধু। এভাবে হারিয়ে যেতে হয় না। আমরা বড়ো একা হয়ে যাই। আমার কোন ভাই নেই রে। তোকে একটু ভাইয়া ডাকতে দিবি?

 

==============================

টিপুর কিছু প্রোফাইল লিঙ্কঃ

১। https://www.facebook.com/itipu

২। http://techtunes.com.bd/tuner/ismail_tipu/

৩। http://www.somewhereinblog.net/blog/pakachul/29490077

৪। http://www.amarbornomala.com/ismail_tipu.html

৫। http://forum.projanmo.com/user8091.html

টিপুকে নিয়ে কিছু পোম্টসঃ

১। http://www.somewhereinblog.net/blog/MahmudaSonia/29490312

২। http://techtunes.com.bd/news/tune-id/98628/

Leave a Comment