Hafizul Islam

নাটিকা: শান্তি ও যুদ্ধের মধ্যে কথোপকথন

পড়েছেন: 1,009 জন পাঠক

চরিত্র সমুহঃ  শান্তি, যুদ্ধ, দর্শক

[একজন শান্তির চরিত্রে অভিনয় করবে। আরেকজনকে দেখা যাবে যুদ্ধের চরিত্রে। মঞ্চের পেছন থেকে প্রথমে নেপথ্য শব্দআবহ ভেসে আসবে। সম্ভব হলে আলো-আধারির পরিবেশ তৈরী করা হবে। দুটি চরিত্র মঞ্চের দুইপাশে নিজেদের দরকার অনুসারে স্থান পাল্টে সংলাপ চালিয়ে যাবে। কিছুটা নাটকীয় ঢং ও আওয়াজে কথা হবে। ]

 

সংলাপ ১

শান্তিঃ
যুদ্ধ! যুদ্ধ তুমি কোথায়? দেখা দাও তো!
তোমার সাথে আলাপ আছে।
যুদ্ধঃ
কী শান্তি?
আমাকে তোমার দরকার পড়লো কোন কারণে?

 

সংলাপ ২

শান্তিঃ
চারদিকে তোমার উপস্থিতির চিহ্ন দেখে দেখে আমি ক্লান্ত।
কেনো নষ্ট করছো মানুষের শান্তি?
যুদ্ধঃ
আমি নষ্ট করছি!! অবাক করলে হে তুমি! আমার দায় কেনো হবে?
মানুষের মধ্যে আদিমকাল থেকেই আমার বসবাস। আমি যুগযুগান্ত ধরে টিকে আছি।
নানা রূপ আর বিস্তার নিয়ে। বরং, তুমি মানবের মাঝে অনাহুত।

 

সংলাপ ৩

(শান্তির কথা বলার সময় সম্ভব হলে একটু পাখির ডাক, বৃষ্টির শব্দ নেপথ্যে বাজবে।)

শান্তিঃ
তুমি ভুল বলছো। মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমি আছি বলেই ছোট্ট শিশু তার মায়ের কোলে নিরাপদে ঘুমায়। বাবার কাধে ভর দিয়ে হাঁটতে শিখে সন্তান। ভাইয়ের উপর নিশ্চিন্তে বিশ্বাস রাখে বোন। ফুল ফুটে। পাখি গান গায়। এখনো কবিদের কলম শব্দের রেলগাড়ি বানায়। চিত্রকর রঙের ছোঁয়ায় জীবন্ত করে তোলে ক্যানভাস।
যুদ্ধঃ
হা হা হা হা! হাসালে! কেউ আসলে তোমাকে ভালোবাসে না। সবাই ভালোবাসে শক্তি, ক্ষমতা। এই ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত মানুষ। তুমি কি দেখো না, ক্ষমতার লোভ দিয়ে আমি স্বার্থপর করে তুলছি মানুষকে? গণতন্ত্র আর পূঁজিবাদের কাছে সেই কবেই বিক্রি হয়ে গেছে তাদের বিবেক..। হামলা-মামলার ভয় দেখিয়ে কেড়ে নিয়েছি তাদের মানসিক শান্তি। কীসের ভালোবাসার কথা বলছো তুমি? হুহহ! আমার হাতে রয়েছে বড়ো বড়ো শক্তিধর মোড়ল। আর তুমি আসছো কবিদের কথা বলতে!! একদিন তুমিও আমার ভক্তের দলে চলে আসবে শান্তি। ভেবো না।

 

সংলাপ ৪

শান্তিঃ
কক্ষনো না! এমন দিবাস্বপ্ন দেখো না যুদ্ধ। আমি বিশ্বাস রাখি নিজের উপর। একদিন পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়বো আবার। সেদিন কোথাও কোন দুঃখ-কষ্ট থাকবে না। উদ্বাস্তু হবে না কোন পরিবার। কেউ হারাবে না তাদের শান্তির নীড়। আশা, শান্তি ও সুসময়ের পায়রা এই উড়লো বলে।
যুদ্ধঃ
ধূর বোকা! কে বলেছে তোমাকে এমন দিন আসবে কখনো!! পাগল হলে নাকি!!! শান্তি কখনোই আসবে না। কারণ, মানুষ তোমার বদলে আমাকে চায়। আমি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছি। পৃথিবীর তাবৎ ধনসম্পদ দিয়ে আমাকে সাজানো হচ্ছে। আমার ডাইনিং টেবিল ভরে উঠছে বিলাসী খাবারে। অথচ, তুমি থাকছো ভুখা নাঙ্গা হয়ে। যত্নের অভাবে তোমার চেহারার কী হাল হয়েছে, দেখেছো?

 

সংলাপ ৫

শান্তিঃ
হতে পারে আমি ইদানিং ভালো নেই। তাতে কী! আবার নতুন দিন আসবে। মানুষ সেদিন তোমাকে ধ্বংস করবে। আমার দিন ফিরবে।
যুদ্ধঃ
আসলেই তুমি পাগল হয়ে যাচ্ছো। আরে বুরবাক! চোখ মেলে দেখো। তোমাকে কেউ ভালোবাসে না। আমাকে খুশি করার জন্য মানুষ কতো কিছু করছে। আমার জন্য খরচ হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। আর তোমার জন্য? তোমার কপালেতো কেবল দাতব্য আর দান-খয়রাত জুটছে..। হে হে হে।

 

সংলাপ ৬

শান্তিঃ
তোমার দুঃশাসন এই অবস্থা তৈরী করলেও মনে রেখো আমি আছি। মানুষের মনে আমার জায়গা সৃষ্টির শুরু থেকেই। হয়তো সাময়িক মোহ তাদের বিপথে নিচ্ছে। তারা কলের পুতুলের মতো তোমার ইশারায় চলছে। কিন্তু, একদিন তাদের হুঁশ ফিরবে। সেদিন আর তোমার রক্ষা নেই। মনে রেখো এই কথাটা।
যুদ্ধঃ
নাহ! এমন জঘন্য দিন জীবনেও আসবে শান্তি মিয়া! আসলে তখন দেখা যাবে।

 

সংলাপ ৭

শান্তিঃ
যুদ্ধ! চলো সব ভুলে গিয়ে শান্তিবাড়ির বাসিন্দা হয়ে যাও। ভোরের কুয়াশা, বসন্তের হিমেল হাওয়া, ধানের ঘ্রাণ, বৃষ্টির রিমঝিম গায়ে মেখে শান্ত হও। শান্তির পৃথিবীতে মানুষের কল্যাণে আমাকে কাজ করতে দাও। নিজের নোংরা নাক আর গলানোর দরকার নেই। কী বলো? বন্ধু হবে আমার?
যুদ্ধঃ
এ্যাঁ এটাতো সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। তোমার কথায় আমার বরং ঘুম পাচ্ছে। হে হে হে।

 

সংলাপ ৮

(আশাজাগানো কোন গান অথবা শব্দ পূর্ণতালে বাজবে নেপথ্যে)

শান্তিঃ
যাই করো তুমি যুদ্ধ, আমি আছি। আমি আবার ফিরবো। চিরদিনের জন্যই ফিরে আসবো পৃথিবীজুড়ে। তোমাকে তখন বাক্সে বন্দি করে পাঠিয়ে দিবো শত আলোকবর্ষ দূরে। শান্তি, সুন্দর আর সত্যের জয় হবেই। জগতের সকল প্রাণী সুখী হবে বন্ধু। মানুষ যে প্রকৃতির আশীর্বাদে অনন্তকাল ধরে শান্তিপূত্র।

 

(মঞ্চ খালি হয়ে যাবে। নতুন দৃশ্যের অবতারণা ঘটবে। নেপথ্য শব্দআবহ পাল্টে যাবে।)

 

 

# আনুমানিক ডায়লগ শব্দসংখ্যাঃ ৫৫০
# প্রস্তাবিত সর্বোচ্চ সময়দৈর্ঘ্যঃ ৬ থেকে ৭ মিনিট


(জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯ সালের ৪৮ তম আবর্তনের নবীন বরণ ও ৪২ তম আবর্তনের বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য লেখা হয়েছে। প্রথম কোন নাটিকার জন্য লেখা। সংলাপ ও শব্দের দুর্বলতা আছেই। বিরক্তি তৈরী করতে পারে। সেক্ষেত্রে লেখক ক্ষমাপ্রার্থী। )

Leave a Comment