Hafizul Islam

ড্রোন; একটি যান্ত্রিক ফড়িংয়ের ইতিবৃত্ত

পড়েছেন: 717 জন পাঠক

অসীমের করিডোরে পা রাখার দুঃসাহসী ইচ্ছে মানুষের সবসময়ই হয়েছে। ঈকারাসের ডানায় চেপে মানুষর স্বপ্ন পাড়ি দিতে চেয়েছে মহাকাশের সীমানাহীন বিস্তার।ক্রমশ বেড়েছে পৃথিবী নামক সবুজ গ্রহটির বয়স। বেড়েছে সভ্যতার গতিবেগ। প্রযুক্তির পালে হাওয়া লাগিয়ে দ্রুত ধাবমান বর্তমান শতাব্দিতে বিজ্ঞান জন্ম দিচ্ছে অসংখ্য সব বিস্ময়ের। আজকে বলবো তেমনই এক অবাক করা গল্প।শোনাবো ড্রোন নামক এক যান্ত্রিক ফড়িংয়ের ইতিকথা।

শুরুর কথা

১৯৫৯ সাল। আমেরিকান বিমান বাহিনীর গোপন (Classified)এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব করে, অদ্ভূত এক বিমান আবিষ্কারের। যার মূল থিম হচ্ছে, পাইলট থাকবে না এই বিমানে। শুরু হলো প্রথম মনুষ্যবিহীন বিমান তৈরীর কাজ। জন্ম নিলো Unmanned Arial vehicle (UAV) আনম্যানড এ্যারিয়াল ভেহিকল বা ড্রোন। ড্রোন শব্দের আভিধানিক অর্থ হল গুঞ্জন। মৌমাছির গুঞ্জনধ্বণি তুলে পথ পাড়ি দেয় বলেই এই নামে ডাকা হয় মানুষ্যবিহীন ড্রোনকে।

১৯৫৯ সালে ড্রোনের জন্ম হলেও এর শুরুটা ছিলো আরো আগের। ১৯১৬ সালে রেডিও গাইডেন্স সিস্টেমের (Radio Guidance  System ) জনক নামে পরিচিত এ.এম লস (Professor Archibald Montgomery  Low)কর্তৃক এর শুরু।আগের বছর, প্রখ্যাত আবিষ্কারক, আধুনিক এসি বিদ্যুৎ এবং তারবিহীন বিদ্যুৎ পরিবহন ব্যবস্থার অন্যতম জনক , নিকোলাস টেসলা (Nikola Tesla)এই মানুষ্যবিহীন ফ্লাইট টার্গেটিং বিমান বা ভেহিকলের ধারণা প্রধান করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে, হিউয়েট স্পেরী অটোমেটিক বিমান (Hewitt-Sperry  Automatic  Airplane)সহ আরো অসংখ্য রিমোট কন্ট্রোলড বিমানের (RPV- Remote Piloted Vehicle)ধারণা ডেভেলপ করা হয়। এবং, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকে। প্রথম সার্থক ধাপ ছিলো, চিত্রতারকা এবং মডেল এ্যারোপ্ল্যান সংগ্রাহক Reginald Denny  এর হাত ধরে। তার হাতে তৈরী হয় প্রথম রিমোট কন্ট্রোলড মডেল বিমান। ২য় বিশ্বযুদ্ধে এর ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়।  Teledyne Ryan  কর্তৃক উদ্ভাবিত ফ্রিবী ১ (Firebee I), বিখ্যাত কোম্পানী বীচক্রাফট (Beechcraft)কর্তৃক নির্মিত Model 1001 মডেলের রিমোট কন্ট্রোলড বিমানগুলো ছিলো ভিয়েতনাম যুদ্ধের পূর্বপর্ন্ত সার্থক ড্রোন যাত্রা।

পরিচিতি

বিভিন্ন কারণ ও কাজের ধরন লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে এই বিমানের। Unmanned air vehicle, Unmanned aircraft system, Remotely piloted aircraft,ইত্যাদি। এই বিমান Unmanned air vehicle, বা UAV বেশী পরিচিত হলেও যেহেতু এই বিমানের সাথে, উপগ্রহ, গ্রাউন্ড স্টেশন, কম্পিউটার, ডাটা লিঙ্ক ইত্যাদি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে একে Unmanned aircraft system বা UAS অধিক সমিচীন মনে হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে আক্রমনের জন্য ব্যবহ্রিত যয়ে যে চালকবিহীন বিমান তা হল unmanned combat air vehicle (UCAV) বা combat drone।

প্রথম ব্যবহার

১৯৬৪ সালের ভিয়েতনাম যুদ্ধে টনকিন উপসাগরে প্রথম স্বার্থক ব্যবহার হয় এই পাইলটবিহীণ যুদ্ধবিমান। ক্লাসিফায়েড তথ্য হওয়ার কারণে তখনও সবাই জানতে পারে নি ড্রোণের কথা। ১৯৭৩ সালে আমেরিকান সেনাবাহিনী প্রথাম স্বীকার করে ভিয়েতনাম যুদ্ধে মানুষবিহীন বিমান ব্যবহারের কথা। ১৯৭৩ সালের আরব ইজরায়েল যুদ্ধে সিরিয়ার মিসাইল ব্যাটারী যখন কোন ইজরায়েলী বিমানকে কাছে ভিড়তে দিচ্ছিলো না, তখন এই ইজরায়েলী Unmanned air vehicle (UAV) ই সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষাকে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে পাল্টে দিয়েছিলো যুদ্ধের ছক।১৯৮২ সালের লেবানন যুদ্ধে ইজরায়েল ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে এই পাইলটবিহীন বিমান। ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে আমেরিকান সেনাবাহিনী অধিক মাত্রায় ব্যবহার করে এই বিমান। আফগানিস্তান যুদ্ধে “ড্রোন” বিমান হামলা পর্বতসঙ্কুল দুর্গম গিরিপথে ব্যবহৃত হয়েছে ব্যাপকহারে।যতই দিন যাচ্ছে বিমান বাহিনীতে তুলনামূলক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে পাইলটবিহীন বিমান। প্রচলিত বিমানযুদ্ধে পাইলটের জীবনহানি বা শত্রুর হাতে বন্দী হওয়ার যে আশঙ্কা থাকে তা এড়াতেই এই পাইলটবিহীন যুদ্ধবিমানের ব্যবহার বেড়েছে।

শ্রেণীবিভাগ

** পাইলটবিহীন বিমানকে তাদের কাজ অনুসারে ৬ ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকেঃ

১)টার্গেট বিমান

২)গোয়েন্দা বিমান

৩)আক্রমন বা কমব্যাট বিমান

৪)পরিবহন বিমান

৫)গবেষনা এবং উন্নয়ন বিমান

৬) বেসামরিক এবং বানিজ্যিক বিমান।

** মানুষবিহীন এই বিমানকে আবার উচ্চতা, গতিবেগ এবং রেঞ্জ অনুযায়ী বিভিন্নভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে

  • হাতে ধরা (Hand-held) – (রেঞ্জ-২কি,মিঃ উচ্চতা ৬০০ মিটার)
  • কাছের(Close ) – (১৫,০০ মিটার উচ্চতা রেঞ্জ-১০কি মি)
  • ন্যাটো টাইপ (NATO type)- ৩,০০০ মিটার উচ্চতা এবং ৫০ কিঃমিঃ রেঞ্জ)
  • কৌশলগত (Tactical ) – উচ্চতা (৫,৫০০০ মিটার উচ্চতা এবং ১৬০ কিলোমিটার রেঞ্জ) মেল-MALE (medium altitude, long endurance) – ৯,০০০ মিটার উচ্চতা এবং ২০০ কিলোমিটার রেঞ্জ।
  • মেল HALE (high altitude, long endurance) –উচ্চতা ৯,১০০ মিটার এবং রেঞ্জ – যে কোন দুরত্ব থেকে নিয়ন্ত্রন যোগ্য।
  • হাইপারসনিক- HYPERSONIC উচ্চগতির সুপারসনিক গতিবেগ ১-৫ ম্যাক বা হাইপারসনিক ( ৫ম্যাক এর অতিরিক্ত গতিবেগ,১৫,০০০ মিটারের বেশী উচ্চতায় উড়তে সক্ষম- রেঞ্জ- ২০০ কিঃমী এর বেশী)।
  • পৃথিবীর কক্ষপথে উড়তে সক্ষম এবং গতিবেগ ২৫ ম্যাক এর চেয়ে বেশী।

সনিক হল যা শব্দের সমান গতির, সুপারসনিক শব্দের চেয়ে ১.২ থেকে ৫ গুন বেশী গতি সম্পন্ন, হাইপার সনিক শব্দের থেকে ৫-১০ গুন বেগ, এবং হাই হাইপারসনিক হল শব্দের চেয়ে ১০ গুনের অধিক গতিবেগ সম্পন্ন।

কাজের ধরণ

একটি আনম্যানড এয়ারক্রাফট সিস্টেমে যা থাকে

১) চালক বিহীন বিমান

২) গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেম

৩) ডাটা লিঙ্ক ।

চালক বিহীন বিমান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে উপগ্রহ তা পাঠিয়ে দেয় ভূমিতে অবস্থিত রিসিভারে। রিসিভার থেকে তা যায় গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেমে। এই গ্রাউন্ড কন্ট্রোলে থাকেন পাইলট।কম্পিউটারের সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষন করে নির্দেশ দেন যা মুহুর্তের মধ্যে পৌছে যায় বিমানে এবং বিমান পাইলটের নির্দেশ পালন করে। পুরো ঘটনাতে সময় লাগে মাত্র ২ সেকেন্ড।

উদাহরনস্বরূপ বলা যেতে পারে আর,কিউ-৭ শ্যাডো চালক বিহীন চালক বিহীন বিমান সিস্টেমে থাকে ( RQ-7 Shadow UAS ) চারটে চালক বিহীন বিমান, দুটো গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেম( GCS), একটী ভ্রাম্যমান গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেম, একটি লাঞ্চার, একটি গ্রাউন্ড ডাটা টার্মিনাল( Ground Data Terminals , GDTs), যা উপগ্রহ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে, একটি দূর নিয়ন্ত্রিত ভিডিও টার্মিনাল যেখানে বসে পাইলট সমস্ত কিছু দেখতে পান এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

কাজের ক্ষেত্র

  • চালক বিহীন বিমান বেশী ব্যবহৃত হয় সামরিক ক্ষেত্রেঃ-

নিরাপত্তাঃ

 নিরাপত্তা এবং নিয়ন্ত্রন

 আকাশ পথে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে।

 বিমান চলাচল এবং নিরাপত্তা পর্যবেক্ষনে। যুদ্ধক্ষেত্রে সার্বিক ব্যাবস্থাপনায়।

 রাসায়নিক, জীবানু অস্ত্র , বিকিরন বা পারমানবিক ঝুকির মধ্যে ব্যবহার।

 টেলিকমুনিকেশান।

 গ্রাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেমের সাথে যোগাযোগ হারালেও চালক বিহীন বিমান স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিশন শেষ করতে সক্ষম।

  •  অনুসন্ধান এবং উদ্ধার তৎপরতায়ঃ

 পাহাড় পর্বত, মরুভূমি বা যে কোন পরিবেশে উদ্ধার ও অনুসন্ধান।

 উদ্ধার সামগ্রী সরবরাহে।

 উদ্ধার এলাকা চিহ্নিত করতে

পর্যবেক্ষনেঃ

 জাহাজ এবং নৌ চলাচল পর্যবেক্ষনে।

 বায়ু দুষন মাত্রা নির্ধারনে।

 দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়।

 

বহনযোগ্য অস্ত্র

  • যে সমস্ত অস্ত্র বহন করে থাকেঃ

 আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল

 এন্টি ট্যাঙ্ক মিসাইল

 আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল।

 নিয়ন্ত্রনযোগ্য গোলা । ইত্যাদি

ক্রুজ মিসাইল এবং চালকবিহীন বিমান এই দুই অস্ত্রই নিক্ষেপের পর তা তাদের ইচ্ছেমত গতিপথ পরিবর্তন করতে এবং সুবিধামত আঘাত হানতে পারে পার্থক্য হল মিসাইল নিজেই একটা অস্ত্র এবং আঘাত হানার পর তা ধ্বংশপ্রাপ্ত হয় কিন্তু চালক বিহীন বিমান আঘাত হেনে ফিরে আসে এবং তা বারংবার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেহেতু চালক থাকে না সেহেতু চালকের জন্য যে সমস্ত সুবিধা থাকা দরকার যেমন ককপিট, অক্সিজেন সিলিন্ডার, প্যারাসুট ইত্যদির ও দরকার পড়ে না। ফলে চালক বিহীন বিমান বেশী পরিমান গোলাবারুদ ,মিসাইল ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র বহন করতে পারে। আকার এবং আকৃতিতে মনুষবিহীন এই বিমান বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। সবচে ছোট গুলো মাত্র কয়েক পাউন্ড ওজনের খেলনা বিমানের সমান আবার বড় গুলো বোয়িং বিমানের সমান আকারের এবং ৪০,০০০ পাউন্ড ওজনের হয়ে থাকে।

 

চালক বিহীন বিমানের ব্যবহার শুরু হয়েছিল সামরিক বাহিনীতে এখন তা বেসামরিক কাজেও ব্যাবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ের ওয়েবসাইট অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী পরিচালক জেফ বেজোস জানান, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পার্সেল পাঠানোর কাজে ব্যবহৃত হবে ড্রোন (মনুষ্যবিহীন) বিমান। যুদ্ধক্ষেত্রের ড্রোন এবার ডাক যোগাযোগ ক্ষেত্রে ব্যাপক হারে ব্যবহারের কথা ভাবছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি ‘অকটোকপ্টার’ নামের মিনিড্রোন বিমান ব্যবহার করেছে গ্রাহকের কাছে মালামাল পৌঁছে দেয়ার জন্য। তিরিশ মিনিটের যেকোনো দূরত্বে ড্রোন দিয়ে মালামাল পৌঁছে দেয়ার আপাত পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে অ্যামাজন। ড্রোন  ভিন্ন রকম এক যুদ্ধ ঘোষণা করলো বেলজিয়ামের এক স্কুল। পরীক্ষায় নকল রোধে তারা এখন ব্যবহার করছে দারুণ এই প্রযুক্তিটি। বেলজিয়ামের থমাস মোর স্কুল এরইমধ্যে মনুষ্যবিহীন এই উড়ন্ত যানের বহুমাত্রিক ব্যবহার শুরু করেছে। পরীক্ষার হলে কোনো শিক্ষার্থী যাতে অসদুপায় অবলম্বন করতে না পারে সেজন্য ড্রোনটি উড়ে বেড়াবে ক্লাসময় এবং তীক্ষ্ণ নজর রাখবে পরীক্ষার্থীদের গতিবিধির ওপর। যুক্তরাষ্ট্রে জঙ্গলের ভেতর অবৈধভাবে কুকুর ও বিড়ালছানা প্রজনন খামারগুলোর অবস্থান শনাক্ত করতে বেসামরিক ড্রোন ব্যবহৃত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় গন্ডার পাচার রোধ করতে সীমিত পাখার ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। নেপাল ও আফ্রিকায় ড্রোন ব্যবহারের জন্য গুগল থেকে অনুদান পেয়েছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড। পরিবেশবাদীরা বলছেন, এ প্রযুক্তি পশু হত্যা, বন নিধনের মতো অপরাধের বিস্তার রোধ করতে সহায়তা করবে। ড্রোনকেই শুটিংয়ের কাজে গত দুবছর যাবত ব্যবহার করছেন কম্বোডিয়ান-আমেরিকান ফিল্মমেকার চিয়ান লং। চিয়ান লং বলেন “এটা দিয়ে আমি অনেক ইন্টারেস্টিং শট পাই যা অন্যকোনভাবে সম্ভব ছিল না। এটি যেকোন ছোট-খাট বা আট-সাট জায়গায় চলে যেতে পারে। আর এখন এর দাম নাগালে চলে আসায় কম খরচে আমার প্রোডাকশান উন্নত হচ্ছে।” চিয়ানের এই ড্রোনটির নাম ডিজেআই ফ্যান্টম, যা ঘন্টায় ২১.৬ কি.মি বেগে চলে। দেখতে একটি ছোট্ট পিজ্জার বক্সের সমান ড্রোনটি সর্বোচ্চ ৩শ মিটার পযর্ন্ত যেতে পারে। – চিয়ান আশা করছেন এই প্রযুক্তি আরো উন্নত হবে এবং ভবিষ্যতের সিনেমার অ্যারিয়াল শটগুলোর জন্য ড্রোনের ব্যবহার আরো বাড়বে।

 

বিশেষত্ব

১) চালকের আসনে একজন প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত পাইলটের দরকার পড়ে না।

মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর পরিবেশে চালক বিহীন বিমান কাজ করতে পারে।

) ৩০ ঘন্টা পর্যন্ত আকাশে থেকে, দিন রাত, এমনকি অন্ধকারের মধ্যেও তা কাজ করতে পারে।

৪) কুয়াশা বা মেঘের মধ্যেও সঠিকভাবে দ্রুততর সময়ে বারবার স্ক্যান করতে পারে।

৬) কোন এলাকার, মোবাইল ফোন, রেডিও বা টেলিভিশন সঙ্কেতকেও পর্যবেক্ষন করতে পারে।

 

আমেরিকাতে প্রায় ৫০ টা কোম্পানী এখন চালক বিহীন বিমান তৈরী করছে ।প্রায় ১৫১ টি মডেল রয়েছে চালক বিহীন বিমানের। অবিশ্বাস্য গতিতে বাড়ছে চালক বিহীন বিমানের উৎপাদন ব্যবহার এবং সুযোগ সুবিধা। অস্ত্রের আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় পণ্য ড্রোন। ড্রোনের ক্রেতা উন্নত থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশগুলো। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার উন্নয়নশীলদেশগুলো ড্রোনের ক্রেতায় পরিণত হয়েছে। ইরান, ভারত, পাকিস্তান, সিরিয়া, আজারবাইজান, আর্মেনিয়ার মতো দেশগুলো ড্রোনের ক্রেতায় পরিণত হয়েছে। ড্রোন প্রস্তুতকারী কোম্পানীগুলো ব্যবসায় বাড়ানোর জন্য নানান প্রচার-প্রচারণা ও লবিং শুরু করেছে। সম্প্রতি বারাক ওবামা একটি আইন পাস করেছেন যার অধীনে বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানীগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমার মধ্যেই ড্রোন ব্যবহার করতে পারবে। এমনকি সংবাদ-মাধ্যমগুলোও সংবাদ সংগ্রহের জন্য ড্রোন ব্যবহার করবে।

বাংলাদেশে ড্রোন

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের এক শিক্ষার্থী  আবদুল্লাহ আল মামুন খান ড্রোন-এর আদলে চালকবিহীন একটি উড়ন্ত যান তৈরি করেছেন। তবে তা বড়ো নয়, আকারে খুবই ছোট। যাকে বলা হচ্ছে ‘কোয়াডকপ্টার’।কোন স্থানে বিষাক্ত গ্যাসের অস্তিত্ব আছে কি-না, এটি ব্যবহার করে তা চিহ্নিত করা সম্ভব। কোন নিউক্লিয়র রি-অ্যাক্টর দুর্ঘটনায় পড়লে সেখানে রেডিয়েশনের মাত্রা নির্ণয়ের জন্যও এটি ব্যবহার করা যাবে। দুর্যোগপ্রবণ আমাদের এই দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অনেক ক্ষেত্রে এই যানটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

কোয়াডকপ্টার মূলতঃ একটি উড়ন্ত যান যাকে কন্ট্রোল করা হয় চারদিকে চারটি ব্রাশলেস ডিসি মটর এবং প্রোপেলর দ্বারা। এটি সাধারণ উড়োজাহাজের মত রোল, পিচ এবং ইও এই তিন অক্ষ বরাবর চলতে পারে। চারটি মটরের গতি পরিবর্তন করে এটি তিন অক্ষ বরাবর ঘুরানো যায়। আর এটি স্বাভাবিক অবস্থায় যেকোন একটি পয়েন্টে ভেসে থাকতে পারে। একে হোভারিং অবস্থা বলা হয়। এ অবস্থায় চারটি মটরের গতি পুরোপুরি সমান থাকে এবং পুরো ক্রাফটি ভূমির সাথে সমান্তরাল অবস্থায় থাকে।

এয়ার ক্রাফটটি নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে একটি আইএমইউ বোর্ড। এতে আছে থ্রি-এক্সিস জাইরো, এক্সেলেরোমিটার এবং ম্যাগনেটোমিটার। এক্সেলেরোমিটারটি তিন অক্ষ (রোল, পিচ এবং ইও) বরাবর এয়ারক্রাফটটির এক্সিলারেশন সম্পর্কিত তথ্য মেইন প্রসেসরে পাঠায়। জাইরোস্কোপ সেন্সরটি তিন অক্ষ বরাবর, এটি কপ্টারটি হেলানো অবস্থা সম্পর্কিত তথ্য প্রসেসরে পাঠায়।

রিয়েল টাইম ডাটা রিডিং এবং তা ব্যাখ্যা করার জন্যে পিআইডি কন্ট্রোলার ব্যবহার করা হয়েছে। এটি একটি সফটওয়্যার যা ডাটা ইনপুট নিয়ে সেটিকে প্রসেস করে বুঝতে পারে যে কপ্টারটি কোন পজিশনে আছে। এটি সেই অনুয়ায়ী মটরগুলোকে সিগনাল পাঠায়। মটরগুলো প্রসেসরের পাঠানো কমান্ড অনুযায়ী তাদের গতি পরিবর্তন করে। আরো উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করছে এর উদ্ভাবক টিম।

বহুবছর পূর্বের কোন এক গ্রীষ্মে, অসমসাহসী ইকারাস মোমের পাখার তৈরী কোন এক যানে করে ছুঁতে চেয়েছিলেন মহাকাশের কার্নিশ। মিশরের ফারাও ২য় রামেসিস পাঠিয়েছিলো শকুণের সিংহাসন। ইতিহাসের পাতায় ছড়িয়ে আছে এমন অসংখ্য গল্প। অসংখ্য প্রচেষ্টার উজ্জ্বল সারথিদের বয়ান। সেসব আজ অতীত। প্রযুক্তি মানব সভ্যতাকে নিয়ে ছুটছে অন্যরকম উচ্চতায়। এই উন্নতির রেসে বাংলাদেশও পথ হাঁটছে ধীর পায়ে। অপেক্ষায় থাকছে পৃথিবী নতুন ভোরের। যে ভোর বার্তা নিয়ে আসবে মানুষের জন্য নিরাপদ পৃথিবীর। যে পৃথিবী হবে শান্তি ও সুন্দরের সাজানো অধিস্ঠান।

{ একটি মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত }

Leave a Comment