কোন কাহিনীগুলো আপনাকে আকর্ষণ করে বলুন তো? জেমস বন্ডের সিরিজ কিংবা টম ক্রুজের মিশন ইমপসিবল দেখে উত্তেজনা আর উৎকন্ঠা অনুভব করেন নি, একথা কি বলতে পারবেন? যদি বলেন, না, আপনি কোন আকর্ষণ খুঁজে পান নি। তাহলে নিশ্চয়ই ভায়োলেন্ট কিংবা সহিংস কোন মুভি আপনার ভালো লাগার তালিকায় থাকতে বাধ্য। আপনাকে মেনে নিতেই হবে, ক্রিমিনাল স্টোরিগুলো অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। এমনসব কাহিনীর চিত্রায়ন দেখতে কিংবা সিডনি শেলডনের থ্রিলার গল্প পড়তে গিয়ে আপনার এড্রিনালিন রাশ হবেই। উত্তেজনার একটি ঝলক আপনাকে ছুঁয়ে দিতে বাধ্য।
একটি অন্যরকম জীবনের গল্প, অর্থ ও ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য , কাহিনীর ট্রাজেডি সবকিছুই রোমাঞ্চকর একটি সময়কে তুলে ধরে আমাদের কাছে। কিন্তু, সবচে চমৎকার ক্রাইমস্টোরি কিংবা অপরাধগল্প আমাদের আটকে রাখে কাহিনীর গভীরে। শুধুমাত্র স্টোরির নাটকীয় প্লট বা মাথাঘুরিয়ে দেয়া টুইস্ট এর জন্যই নয় বরং আমরা এই কাহিনীর চরিত্র ও এর সাথে জড়িত মানুষগুলোর প্রতি মনোযোগী হয়ে পড়ি বলেই এমনটা হয়। বহুবছর থেকে হলিউড আমাদের উপহার দিয়েছে এমন অসংখ্য ক্রিমিনাল কাহিনী, যেখানের নায়কেরা ছিলো সাহসী ও কুশলী। চমৎকার ও বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী। যারা নিজেদের চারপাশে একধরণের ব্যক্তিত্বের আভা ছড়ায়।
আমরা সেইসব ব্যক্ত্বিত্বদের প্রভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ি। এন্টি হিরো হয়েও আমরা তাদের ভালোবাসি। আমরা মনে করতে থাকি, তাদের এইসব অন্যায়ের পেছনে নিশ্চয়ই কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যা আছে। নিশ্চয়ই তাদের এমন কিছু বলার আছে, যা তাদের অপরাধের ক্ষমা পাইয়ে দিবে। অনেকটা রবিনহুড টাইপের জবাবে আমরা নিজেদের আশ্বস্ত করি। আমাদের এই গল্পের মূল চরিত্র কেমবা স্মিথও অনেকটা একই রকম। সেও বিশ্বাস রাখতো যে, তার স্মার্ট এবং রমণীমোহন প্রেমিকেরও কোন না কোন গোপন কাহিনী আছে। সেই গল্পে ভিলেন হয়েও তার প্রিয় মানুষটি আসলে একজন অন্তরালের হিরো।

ভালোবাসার জন্য ত্যাগ নাকি অর্থের জন্য লোভ
১৯৯০ এর দশকে যখন সারা আমেরিকা জুড়ে ড্রাগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছিলো, তখন কর্তৃপক্ষ একজন ছোটখাটো মানুষকে তাদের চিরুণী অভিযানের একেবারে শেষ মুহুর্তে আটক করে। হারানো গুরুত্বপূর্ণ অলংকারের মতো তারা তাঁকে খুঁজে বেড়িয়েছে সারা ইউএস তন্নতন্ন করে। তার নাম ছিলো পিটার হল। বহু আশ্চর্যজনক অপরাধের জনক ছিলো পিটার। সারাটা জীবন ধরে ড্রাগ পাচারের নেশা আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তাড়া খেয়ে বেরিয়েছে সে। অনিশ্চিত জীবনে পিটার দারুন একটি সৌভাগ্যের দেখা পেয়েছিলো। জীবন্ত সেই সৌভাগ্যের নাম ছিলো কেমবা স্মিথ। সদ্য যৌবনে পদার্পন করা স্মিথ তার সমস্ত অস্তিত্ব নিয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন হলের জীবনের সাথে। শুধুমাত্র ভালোবাসার জন্য। তার এই একাগ্রতা বা আত্মদান একইসাথে ক্ষমতা, নৃশংসতা এবং অদ্ভূত এক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে গিয়ে মিলেমিশে হয়ে দাঁড়ায় ইতিহাসের একটি প্রাণময় অধ্যায়ের অংশ। যে অধ্যায় ভালোবাসা, ঘৃণা, ক্ষমতা, লোভ, ড্রাগ আর নৃশংসতার নানা উপকরণে একাকার হয়ে আছে।
পিটার হল কেমবার সাথে প্রথমবারে দেখা হওয়ার আগেই মিলিয়ন ডলারের কোকেইন পাচার করার অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছিলো। তার অপারেশন রুট ছিলো নিউইয়র্ক ও ভার্জিনিয়া। কেমবা ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডের এক শহরতলীর শান্ত পরিবেশে সুন্দর এক সচ্ছল পরিবারে বেড়ে উঠেছিলো। তার বাবা ও মা দুজনেই ছিলেন তার প্রতি আন্তরিক ও তাকে তারা সবসময়ই চোখে চোখে রাখতেন। প্রাক্তন গার্লস স্কাউট এবং স্কুল মিউজিক ব্যান্ডের মেয়ে স্মিথ কখনো ভাবেই নি যে, ভালোবাসা তাকে কীভাবে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে। কিংবা কখনো সে হয়তো কল্পনাও করে নি যে, পিটার হলের ড্রাগ দুনিয়ার কতোটা নিকটে ছিলো তার ভালোবাসর অবস্থান, যার ফলে তাকে সারা জীবন ধরে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে এবং কাটাতে হয়েছে জেলের নিষ্প্রাণ ও বোবা গরাদের ওপারের জমাট অন্ধকারে।
সময় এমন একটা অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছিলো যে, আমি সঠিক কাজটি করতেও ভয় পেতাম। স্মিথ তার এক সাক্ষৎকারে বলেছিলেন তখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে।
গোলাপ ও কাঁটার সজ্জা
১৯ বছর বয়সী কেমবা স্মিথ পড়াশোনা করতেন হাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে হলের সাথে তার প্রথম দেখা। ক্যাম্পাসের অন্য সব মেয়ের মতো হলকে সে ভীষণ আগ্রহ নিয়েই লক্ষ্য করেছিলো। স্মিথ জানতো যে, হল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রও ছিলো না এবং সে শিক্ষকও নয়। মেয়েদের কাছে বরাবর তার খুব কদর ছিলো। পার্টিতে ড্রাগ ডিলার হিসেবে তার মনোযোগি ও উদ্দেশ্যপূর্ণ পদচারণাও দৃষ্টি কাড়তো। স্মিথ সরাসরি হলের সাথে কোন যোগাযোগে ইচ্ছুক না হলেও অবচেতন মনে সে হলের আর্কষণ থেকে মুক্ত ছিল না। তার নায়কোচিত ভাব এবং আক্রান্ত করে ফেলার মতো ব্যক্তিত্ব তাকে সবসময়ই আকর্ষণ করতো।
আমি ভীষণ আনন্দিত ছিলাম। আমি জানতাম সে আমাকে লক্ষ্য করতো । হলের মেয়ে সঙ্গীদের সাথে তার জ্যামাইকান টোনে কথা বলার শব্দও স্মিথ মনে করতে পারছিলো।
স্মিথ এর আগে কখনো কোন ড্রাগ ডিলারের প্রেমে পড়ে নি। পোস্টার চাইল্ড: দ্যা কেমবা স্মিথ স্টোরি নামক নিজের আত্মজীবনিতে স্মিখ লিখেছেন, প্রেমে পড়ার দিনগুলোতে তার হৃদয় উন্মুক্ত থাকলেও তার চোখ এবং কান থাকতো চুপ। এমনকি তাদের প্রথম ডেটে স্মিথের চোখ বেঁধে নিয়েছিলো হল। যাতে সে হলের জীবনযাপন ও তার ড্রাগ ট্রাফিকারের গোপন চরিত্রের দেখা তখনই না পায়।

একজন ড্রাগ-ডিলারের গার্লফ্রেন্ড হওয়ার উত্তেজনা তাদের সম্পর্কের চারপাশে সমস্ত বিপদচিহ্নকে ঢেকে দিয়েছিলো। কেমবার মনে হতো, পৃথিবীর সবচে চমৎকার মানুষটির প্রেমে পড়েছে সে। নেশার জগতে পিটারের হাত ধরে প্রথম পদক্ষেপ দিয়েছিলো। পিটার তাকে মারিজুয়ানার সাথে পরিচিত করিয়ে দেয়। স্মিথকে হল দারুনসব শপিং ট্রিপে নিয়ে যাতো। দামী দামী জুয়েলারি আর পোশাকের স্তুপের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছিলো স্মিথের সকল অমঙ্গল ভাবনা ও দুশ্চিন্তা।। যে চকচকে জীবনের মধ্য দিয়ে সে যাচ্ছিলো, সেটা তার বয়সী কলেজ ছাত্রীর জন্য চমকপ্রদ ও চকোলেটের মতো লোভনীয় ছিলো। আর, পিটারের সমস্ত ব্যক্তিত্ব দিয়ে আকর্ষণ করার ক্ষমতা ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিয়েছিলো স্মিথকে।
আমার তখনকার চঞ্চল, অপরিপক্ক মন নিয়ে আমি ভাবতাম, ওয়াও! নিশ্চয়ই সে আমাকে ভীষণ ভালেবাসে। আমার মনে হতো আশেপাশের মানুষ লক্ষ্য করছে আমাকে। এবং আমি কী করছি সবই তারা দেখছে। আমার মনে হতো আমি জনপ্রিয় আর আকর্ষণীয় মানুষদের একজন কেউ। অল্পবয়সী চঞ্চল কেমবা পিটারের প্রতি গভীর ভালোবাসায় ডুবে যাচ্ছিলো ক্রমশ। সে এমন একজনের মধ্যে নিজের অস্তিত্ব হারাতে শুরু করেছিলো, যে কালো রঙে আঁকা গোলাপের ট্যাটু বহন করতো শরীরে। এই গোলাপের অর্থ হচ্ছে মৃত্যু।
মধুচন্দ্রিমা শেষ হওয়ার সময় হলো
খুব শীঘ্রই স্মিথ জানতে পারলো যে হলের প্রেমিকা হওয়ার সাথে সাথে অবশ্য পালনীয় কিছু বিষয়ও চলে আসতে শুরু করেছে। কিছু কঠিন নিয়ম আর কিছু নৃশংস ঘটনার সিরিজ তার সামনে উন্মোচিত হতে লাগলো। হল ছিলো ভীষণ রকমের জেলাস এবং তার প্রকাশ ছিলো খুবই হিংস্র। হল বলতো যে, স্মিথের সুরক্ষা তার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একদিন হল অপরিচিত একজনের মাথায় শ্যাম্পেইনের বোতল ভেঙেছিলো- স্মিথের সাথে কথা বলার দায়ে। স্মিথ নিজেকে বলতো যে, কখনো সে কোন পুরুষের হাত ধরতো পারবে না কিংবা কারো দিকে তাকাতে পারবে না। এই সবকিছুই হলকে ভয়ংকর দানবে পরিনত করে দিতো।
১৯৯১ এর জুলাইয়ে পিটারের রাগ প্রথমবারের মতো কেবমার জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেয়। বন্ধুদের সাথে ফিলাডেলফিয়ায় একটি বাস্কেটবল ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলো কেমবা। সেদিনই প্রথম পরিচিত হওয়া একজনের হাত ধরে সে রাস্তা পার হচ্ছিলো স্টেডিয়াম এলাকার বাইরে। তখন কেমবা রাস্তার উল্টোদিকে হলকে দেখতে পায়। সে তাদের দিকে চোখ কুচকে তাকিয়েছিলো। তখন দ্রুত কেমবা হলের কাছে যায়। হল তেমন কোন অনুভূতি প্রকাশ না করলেও, যখনই তারা তাদের হোটেল রুমে ফিরে আসে, তখনই পিটার রাগে-ক্রোধে জঘন্যরকমে ফেঁটে পড়ে।

পিটার তার রাগ প্রকাশ করছিলো এমনটা বলতে বলতে যে, আমি তোকে দেখাচ্ছি কী হতো তোর। স্মিথ সেদিনের ঘটনা মনে করে বলছিলো। পিটার এরপর তাকে বুঝাচ্ছিলো, যে লোকটি তার হাত ধরে ছিলো, সে তাকে গ্যাং রেপ করার প্ল্যান করেছিলো। এরপর সে আমাকে মারতে শুরু করে। এবং আমার শরীরকে আটার খামিরের মতো দুমড়েমুচড়ে দিতে থাকে। এমন সব স্থানে সে আমাকে মারছিলো, যে আমার মনে হচ্ছিলো আমার মারা যাচ্চি। আমার সারা মুখ আর চোখের পাতায় রক্তের ধারা গড়িয়ে পড়ছিলো।
তার ট্রমা এবং শক একধরণের অনুভূতিহীন অবস্থায় তাকে নিয়ে যায়। ঘটনাটি স্মিথের কাছে খুব অপমানজনক মনে হয়েছিলো। পরেরদিন সকালে পিটার এসে স্মিথকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে এবং তাকে ক্ষমা প্রার্থনার নিদর্শন হিসেবে একটি মুক্তোর আঙটি কিনে দেয়। এই দ্বিমুখী স্বভাব কেমবাকে ইমোশনাল রোলারকোস্টারে নিয়ে ফেলে। একদিকে তীব্র ভালোবাসা অন্যদিকে অপ্রতিরোধ্য ঘৃণা। যে ভালোবাসা আমি তার জন্য জমিয়ে রেখেছিলাম সবসময়, সেটা তখন তারচে শক্তিশালী ভয়ের আকারে রূপান্তরিত হয়।
বিধ্বংসী এক খেলায় মেতে উঠা
ভয় এবং আনুগত্যের বিধ্বংসী অনুভূতি স্মিথকে হলের ড্রাগ দুনিয়ায় নিয়ে ফেলে ১৯৯১ এর সেপ্টেম্বরে। ভার্জিনিয়ার নিউজপোর্ট নিউজের ড্রাগ অভিযোগের কারণে তখন হলকে গ্রেফতার করা হয়। এবং সে বেল পেতে সে ব্যর্থ হয়। কেমবা স্বীকার করেন যে, সেই সময় তিনি পুরোপুরো ঘোরের মধ্যে ছিলেন। পিটার তার প্রেমিকা স্মিথকে নিজের অনুপস্থিতিতে ড্রাগ ব্যবসা পরিচালনার কাজে রাজি করিয়ে ফেলেছিলো। যদিও এরই মধ্যে স্মিথ তার পার্টনার হলের জন্য নানা ধরণের ড্রাগ ট্রাফিকারের ভুয়া কাগজ, ডকুমেন্ট লেখা, আইডি জাল করা, তার নামে ইউটিলিটি বিল জমা দেয়া, হলের অস্ত্র বহনের মতো গোপন কাজগুলো স্মিথ করে দিতো নিয়মিত।

আন্ডারওয়ার্ল্ড ড্রাগ দুনিয়ায় তার প্রথম পদচারণার ঘটনাটি ঘটে আরো দুই বছর পর, জানুয়ারির ১৯৯৩ সালে। নর্থ ক্যারোলিনা থেকে নিউইয়র্ক ফ্লাইটের যাত্রী স্মিথ তার কোমরে ভাজ করা টাকার বান্ডিল পরিধান করেছিলো। তার উপরে পড়া ছিলো সেদিন সকালে হলের নির্ধারিত বিজনেস স্যুট। যদিও স্মিথের তখন ভীষণ ভয় লেগেছিলো।
আমি তাকে বলেছিলাম যে, কেনো তুমি আমাকে এসব করতে বলছো? আমাকে সব করতে হচ্ছিলো এবিউজ হওয়ার ভয়ে। কারণ, যখনই যে বিরক্ত হতো তখনই বাজে রকমে গালমন্দ করা ছিলো তার নিত্যকার বৈশিষ্ট্য। আমি তখন নীরব হয়ে থাকতাম। আমার পূণরায় এবিউজ হওয়ার ভয়টা কোনভাবেই দূর হতো না।
কিন্তু, এই মারধোর কিংবা চিরতরে মেরে ফেলার ঘটনা মোটেও থেমে থাকে নি। ১৯৯৩ এর মে মাসের এক রাতে কেমবা তার প্রেমিক হলের কাছ থেকে ভয়জড়ানো কিংবা উত্তেজিত গলার ফোনকল পায়। তারপর সে হলের প্ল্যাণ খুব সাবধানে ফলো করে। সে হলকে নর্থ ক্যারোলিনার চারলোটের এক শহরতলী থেকে নিয়ে আসতে বের হয় সেই রাতেই। যখন সে হলের কাছে পৌছে, তখন স্থানীয় একটি মোটেলের পার্কিংয়ে এক মেয়েফ্রেন্ড সহ হলকে দেখতে পায়। মেয়েটিকে হল কাতিয়া নামে পরিচয় করিয়ে দেয়। কেমবা তখন হলের জুতোয় রক্তের জমাট দাগ দেখেছিলো।
যখন খুন হয়ে উঠলো পলায়ণপরতার কারণ
সেদিন চারলোট থেকে শহরে ফিরেই তাড়াহুড়ো করে হল এবং কাতিয়া আটলান্টায় উড়ে যায়। কিছুদিন পর যখন কেমবা হায়ট হোটেলে তাদের সাথে মিলিত হয়, তখন হল স্বীকার করে যে কেমবা তার জুতোয় যে রক্তের দাগ দেখতে পেয়েছিলো সেটা ছিলো তার বন্ধুর। একইসাথে তারা ব্যবসায়িক পার্টনারও ছিলো। সরকারের ড্রাগবিরোধী যুদ্ধের আঁচ তখন ছড়িয়ে পড়ছিলো চারপাশে। হলের সন্দেহ হয়, তার বন্ধু সম্ভবত ফেডেরাল এজেন্টদের সাথে হাত মিলিয়েছে। তাই, সে তার বন্ধুকে সেই রাতে অমানবিক উপায়ে নিজের হাতে খুন করেছিলো।
অবস্থা মেনে নিয়ে হতবিহ্বল স্মিথকে তার বাবা মায়ের বাড়ি, ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডে ফেরার আদেশ দেয় । এবং তাকে শিখিয়েও দেয় যে কর্তৃপক্ষের কাছে কী বলতে হবে আর কতোটুকু এড়িয়ে যেতে হবে। কোনকিছু গোপন না করেই যথাসম্ভব স্মিথ তার সবকথা জানিয়ে দেয় এজেন্টদের। সেইসাথে হলকে জানায় যে ফেডেরাল এজেন্টরা হলের অবস্থান সম্পর্কে আসলে কতোটুকু জানে। তারপর অনেকদিন হলের সাথে শুধু ফোনে কথা হতো স্মিথের। ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় স্মিথ। পড়াশোনার পাশাপাশি সে ভার্জিনিয়া হাউজিং সোসাইটিতে কাজও শুরু করে।
একই বছর ডিসেম্বরে হল আবার তাকে ডেকে পাঠায়। পিটারের আদেশের কারণে স্মিথ দেখা দেয়ার বদলে শহর এড়িয়ে আবার ভার্জিনিয়ায় ফিরে আসে। এই সময়ের মধ্যে কাতিয়া আটলান্টায় এরেস্ট হয়। একজন পুলিশ অফিসারকে খুন করার পর ফার্স্ট এন্ড ফিউরিয়াস স্টাইলের রেস শেষে হল পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু এই হত্যাকান্ড তাকে পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে জায়গা করে দেয়।
আমি খুব ভয়ে ছিলাম এবং বুঝতে পারছিলাম না যে কী করা উচিত। আমি জানতাম তাকে আরেকটি খুন করতে হয়েছে। যা সে আগেও করেছে। আমি আবার এই শহর ছেড়ে অন্য শহরে চলে যাচ্ছি। তার সাথে আমার এই চলে যাওয়ার পর কী ঘটবে, সেটা সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই ছিলো না। আমাকে ছুটতে হবে, এটাই শুধু জানতাম। শান্ত সহজ জীবন ছেড়ে আমি নিজের সাথে কেনো এই আচরণ করছিলাম, কেনোইবা এইরকম অস্থির জীবন বেছে নিয়েছিলাম, তা আমার বোধগম্য ছিলো না। কেবল, মনের গভীর থেকে জানতাম যে, আমি এখনো তার নিয়ন্ত্রণেই আছি।
লম্বা বিরতির পর স্মিথ এবং পিটার হস্টনে দেখা করার সুযোগ পায়। তাদের তখন নিজেদের কোন গাড়ি ছিলো না। প্রবল বর্ষণের মধ্য দিয়ে হলের সাবেক এক আশ্রয়ের ঠিকানায় পথ চলে দু’জন। এই হাইডআউটে পিটার আগেও থেকেছিলে। তারা যখন ভেজা শরীর নিয়ে এপার্টমেন্টে পৌঁছায়, তখন দেখতে পায় দরজা ও জানালায় তালা দেয়া। এবং তেলাপোকার আভাস চারপাশে। শেষবার এপার্টমেন্ট ছাড়ার সময় সেখানে সাময়িক ভাড়াটে বসবাস করতো। তারা কখন কোথায় চলে গেছে পিটারের তা জানাই ছিলো না।
মৃত্যুর দেবতা যখন বাস্তবে এলো
কাতিয়া এরেস্ট হওয়ার পর হলের ভয় ছিলো যে, সে তার সাথে বেইমানি করতে পারে। কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ার আতংক তাকে কঠিনভাবে দখল করে ফেলেছিলো। ভয়ে চুপসে থাকা স্মিথকে সাথে নিয়ে হল একটা ট্রাক ভাড়া করে। তারপর সিয়াটলে স্থায়ী হওয়ার সাময়িক চেষ্টা চালায়। এখানে আসার আগে অ্যারিজোনা ও সান ডিয়াগোতে কাতিয়ার খোঁজ করেছিলো দু’জনে। কিন্তু শিকেয় ভাগ্য আটকায় নি। হল ও স্মিথ তারপর থেকে কয়েকমাস পর পরই এপার্টমেন্ট পাল্টে ফেলতো। কিছুটা নিরাপদে বেঁচে থাকার এটাই ছিলো তখন একমাত্র পথ।
এই অবস্থার মাঝেই কেমবা বুঝতে পারে যে, সে প্রেগন্যান্ট। এই প্রেগন্যান্সি আচানক কেমবার প্রায়োরিটির ধরণ পাল্টে দেয়। সে অনুভব করতে পারে, হলের বিরুদ্ধে সে প্রয়োজনে দাঁড়াতে পারবে। যখন হল তাকে কোন এক রাতে দোকান থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী চুরি করতে আদেশ করে তখন স্মিথ অস্বীকৃতি জানায়। পিটার ক্রোধে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে চিৎকার করে উঠে এবং তাকে চুলের গোছা ধরে টেনে-হিচড়ে আনার চেষ্টা করে। সেই সময় পাশে দিয়ে একটি পুলিশের গাড়ি চলে যাওয়ার কারণে তখনকার মতো বিষয়টির সমাপ্তি ঘটলে এই ঘটনাটি কেমবার জন্য ওয়ার্ণিং কিংবা একধরণের ওয়েকআপ কল হিসেবে কাজ করে। জীবনের নিরাপত্তাবোধ সম্পর্কে তার হঠাৎ করে জ্ঞান লাভ হয় যেনো।
আমি জানতাম সেই সময়ে , কোন ধরণের প্রশ্ন না করেই কিংবা কোন কথা ছাড়াই আমাকে সরে যেতে হবে পিটারকে ছেড়ে। কারণ আমাকে আমার সন্তানের জীবন বাঁচাতেই হবে। তারজন্য যেকোন কিছু করতে হয়, আমার আপত্তি নেই।
তখন হল তার কথা মেনে নেয়। স্বীকার করে, হ্যাঁ সে তার বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় কিছুই দিতে পারছে না। সে তার সন্তানের জন্য সুন্দর ও নিরাপদ একটি জীবন চায়। স্মিথ বলছিলো , তখন হল তার হাতে কিছু টাকা দেয়। স্মিথ সিয়াটল থেকে রিচমন্ডের ট্রেন ধরে মায়ের বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরে আসে। সেখানে তার পরিবারের সাথে একই ড্রইংরুমে পুলিশও অপেক্ষা করছিলো।
২৩ তম জন্মদিনে স্মিথ একটা সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বরে সে বুঝতে পারে যে , তার সন্তানের বাবার সাথে বেইমানি করা তার পক্ষে সম্ভব না। আর, হল তাকে বুঝিয়েছিলো যে, যতোক্ষণ না সে সরাসরি ড্রাগ বিক্রি করছে অথবা কাউকে খুন না করছে, ততোক্ষণ সে নিরাপদ। ড্রাগের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নিয়মই ছিলো, তখন কোন দয়া দেখানো হতো না জড়িত কাউকে। স্মিথের বিপক্ষে ছয়টি অভিযোগের তদন্ত চলমান ছিলো। বিচারক আদেশ দেয়, বিচার চলাকালীন তার নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে। তখন সরকারি উকিলের পরামর্শে তার ঠাঁই হয় ভার্জিনিয়ার সাফোক জেলে। সাত মাসের প্রেগন্যান্ট স্মিথের জন্য এটি ছিলো খুবই কষ্টকর এক অভিজ্ঞতা। ২ সপ্তাহ পরে অক্টোবরের কোন এক রাতে স্মিথ স্বপ্ন দেখে যে, পিটার তার কোলে মাথা রেখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। তার উৎকন্ঠার জবাবে কেমবার আইনজীবি অদ্ভূত একটি সত্য ঘটনা তাকে জানায়। স্মিথ মুখোমুখি হয় বেদনাদায়ক এক ট্রাজেডির। সম্প্রতি তখন হল সত্যিই একজন অপরিচিতের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেছে। কেমবার যে সপ্তাহে স্বপ্ন দেখেছিলো, সে সপ্তাহেই মৃত্যুর এই ঘটনাটি ঘটে।
আমি একটা ব্যাপার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম, আমার সন্তান আমার জীবন বাঁচিয়েছে। যেখানে পিটারের মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে মৃত পাওয়া গেছে, আমিও একই জায়গায় বাস করতাম। যদি আমি প্রেগন্যান্ট না হতাম তাহলে সে আমাকে বাড়িতে পাঠাতো না। আমিও বাসায় যেতাম না। এবং, একটি গুলি মাথায় নিয়ে আমিও পড়ে থাকতাম পিটারের পাশেই।

ভগ্ন হৃদয় ও অনায্য বিচারের দৈন্যতা
হতদরিদ্র জনতার জন্য নির্ধারিত এক কবরস্থানে হলকে দাফন করা হলো। স্মিথ তখনো জেলে তার প্রেগন্যান্সির কষ্টকর মুহুর্তগুলো পার করছিলো। একমাত্র প্রিয়জনকে হারানোর কষ্টের মাঝে থেকেও অনাগত সন্তানের জন্য উৎকন্ঠা তাকে অসহনীয় যাতনা দিচ্ছিলো। ১৯৯৪ এর ডিসেম্বরের কোন এক দিন। তার কোলে এলো তাদের প্রথম সন্তান। দুইজন ইউএস মার্শালের পাহারায় রুক্ষ আর বৈরী পৃথিবীতে পা ফেললো জুনিয়র পিটার। নবযাতক শিশুর সাথে দুইদিন কাটানোর পর তাকে আবার ফিরে যেতে হলো জেলের অন্দরে। শিশুটিকে পাঠানো হলো নানা-নানির কাছে।
আমার তখন অনুভব হচ্ছিলো, আমি চিরতরেই ভেঙে পড়েছিলাম। ভালোবাসার জন্য এমন বেদনা আমাকে কেনো সহ্য করতে হবে, বুঝে উঠতে পারতাম না। ভাগ্যের এই আচরণ নিজের কাছে অবিচার মনে হতো।
কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ধীরে ধীরে স্মিথ তার স্বামী পিটার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে। তার বন্ধু-শত্রু, তার সত্যিকারের বয়স এবং কাতিয়ার সাথে বিয়ে ও তাদের অন্য সন্তানের কথাও সে জানতে থাকে। পিটার তাকে এবিউজ করার মাধ্যমে একধরণের ভয়ের মধ্যে রাখতো। কিন্তু, নিজের সন্তানের কল্যাণের জন্য তাকে এর বাইরে সত্যিকার অর্থে পিটারের ক্ষমতা, তার বিজনেস ইত্যাদি মনে রাখার চেষ্টা করতে হয়েছে। কেমবার জন্য এটা চ্যালেঞ্জিং ছিলো যে, তার সন্তান পিটারকে ভয়ংকর একজন দানব হিসেবে চেনার পরিবের্তে যেনো একজন বাবা হিসেবেই চেনে।
এখনো অনেকে মনে করে যে পিটার হল কিংবদন্তির কোন নায়ক ছিলো। বর্তমানে আমি এইসব বিশ্বাস করি না। কোনকিছু আমাকে সারপ্রাইজডও করে না। এবং পিটারকে নিয়ে প্রচারিত নানান কাহিনীর অংশ হওয়ার আগ্রহও বোধ করি না। পিটারের মৃত্যু ও তার সন্তানের জন্মের চারমাস পর কেমবা জানতে পারে তার শাস্তির ঘোষণা সম্পর্কে। ইউএস ডিস্ট্রিক্ট বিচারক রিচার্ড কেল্লাম তাকে ২৯৪ মাসের শাস্তির আদেশ দিয়েছেন। কেমবার হৃদস্পন্দন তখনই থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েই সে শুনতে পায় তার মায়ের কান্নার শব্দ। কেমবা স্মিথের পক্ষের উকিল আদালতে এইকথা প্রমাণ করেছিলো, কেমবা নিজে কখনো কোন ধরণের ড্রাগ কেনা-বেচায় সম্পৃক্ত ছিলো না। তারপরও বিচারক তাকে ২৪.৫ বছরের শাস্তির আদেশ দেন। তিনি সম্ভবত মাদকের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির উদাহরণ তৈরী করার নেশায় গিনিপিগ হিসেবে কেমবাকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ।
আমার মনের সেলফ ডিফেন্স সিস্টেম আমাকে একটা ধারণা দিচ্ছিলো। আমার মনে হচ্ছিলো, আমাকে মোটেও এতোদিন জেলে কাটাতে হবে না। খুব শী্ঘ্রই আমার মুক্তির ডাক আসবে। এবং ততোদিনে আমার ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাবে। কিন্তু, আমাকে মেনে নিতেই হয়েছিলো যে, আমি আর কখনো তাকে দেখতে পাবো না।

দুঃস্বপ্নের সময় পেরিয়ে উল্টোপথে যাত্রা
কেমবা কারাগারের গরাদের পেছনে তার জীবন কাটাতে থাকেন । মুক্ত জীবনে তিনি ফিরে যেতে পারবেন, এই আশাটুকু কীভাবে যেনো নিজের মধ্যে জিইয়ে রাখতে পেরেছিলেন স্মিথ। তার বাবা-মা তাকে মুক্ত করার জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পেইন শুরু করেন। কেমবা স্মিথের অনায্য শাস্তি অনেকের জন্য আন্দোলনের অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। স্মিথ পরিবারের মতো আরো অনেকেই বিদ্যমান বিচারিক অবস্থার সংস্কার চাইতো। ৬.৫ বছর পর স্মিথের প্রার্থনার উত্তর আসে ভাগ্যের তরফ থেকে। স্মিথ তার প্রার্থনা গ্রহণ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে ধন্যবাদ দিয়ে গেছেন সবসময়। এনএএসিপি লিগ্যাল ফান্ড এটর্ণি, তার বাবা-মা’র বিরামহীন প্রতিবাদ এবং মিডিয়ার অংশগ্রহণ তার পক্ষে জনমত গড়ে তুলেছিলো। ফলশ্রুতিতে ,ক্রিস্টমাসের তিনদিন আগে কেমবা শুনতে পান, তার শাস্তি মওকুফ করা হয়েছে। এবং, খুব শীঘ্রই তাকে মুক্ত করে দেয়া হবে। আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম যে, হয়তো এটা আমার অতিরিক্ত আশার কারণে ভুল ভাবনা হবে। আমি হয়তো ছাড়া পাবো না। হয়তো এমনি বলা হচ্ছে। অল্পসময়ের মধ্যেই আমি আমার কেস ম্যানেজারের কাছ থেকে কল পেলাম এবং তার হাতে উইলিয়াম জুনিয়র ক্লিনটনের সাক্ষর করা অনুমোদনপত্র ছিলো।
২০০০ সালের ডিসেম্বর মাস। স্মিথের শাস্তিকে পূনর্বিবেচনা করা হলো। পাঁচ বছরের পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্মিথের কোনই আপত্তি ছিলো না। কোন ধরণের দ্বিমত পোষণ করার কোন মানসিক দৃঢ়তা বাকী ছিলো না তার । বাইরের দুনিয়ায় যাওয়ার জন্য জেলের দরজা খুলে দেয়া হলো স্মিথের সামনে। এটিই ছিলো স্বাধীন মানুষ হবার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপের শুরু। যখন আমি বাইরে বেরুচ্ছিলাম, আমার এতোদিনের সহসঙ্গী নারীরা চিৎকার করছিলো আনন্দে। আমাকে ভালো থাকার শুভ কামনা জানাচ্ছিলো তারা। স্মিথ সেই সময়ের কথা বলতে গিয়ে আবেগী হয়ে পড়ছিলেন। আমি জানতাম এই নারীদের মধ্যে অনেকেই আমার বন্ধু ছিলো। যারা চিৎকার করে আনন্দ প্রকাশ করছিলো, তাদের অনেকেরই আমার সাথে বাইরের দুনিয়ায়, নিজেদের বাড়িতে পা রাখার অধিকার প্রাপ্য ছিলো। যে অধিকার থেকে অন্যায়ভাবে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।

স্মিথ জানতো, এখানে এমন অনেকেই আছে যারা প্রথমবার সামান্য অপরাধের কারণে অনায্যভাবে অতিরিক্ত শাস্তির স্বীকার হয়েছে তার মতো। কিন্তু, তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিলো না। তারা এখনো জেলেই সময় যাপন করছে। কেমবার সাথে এই অবিচার হওয়ার আগে, সে কখনো জানতোই না , আইনের এমন অন্যায় আচরণের স্বীকারও হতে পারে কেউ। কখনো সরাসরি ড্রাগ বেচাকেনার সাথে যুক্ত না থেকেও কী ভীষণ কঠিন সময় তাকে পার করতে হয়েছে! স্মিথের আন্তরিক অভিপ্রায়, যুবারা- বিশেষ করে যুবতীরা দেশের আইন-কানুন ভালো করে জানুক। এবং তারা যেনো কেউ তার মতো ভুল না করে।
তার এই নিজস্ব অপরাধবোধ তার শক্তিতে পরিণত হয়। ক্রিমিনাল জাস্টিসের সংস্কার নিয়ে আন্দোলনে নামে স্মিথ। এই ব্যাপারে সে কলেজ-ডিগ্রি অর্জন করে। কংগ্রেসের সামনে তার বক্তব্য তুলে ধরে এবং সেই সুবাদে প্রেসিডেন্ট ওবামার সাথে তার সাক্ষাৎও হয়। সে তার জীবন উৎস্বর্গ করে দিয়েছিলো আইনের শাসন ও ড্রাগের বিপক্ষে বিদ্যমান আইন সংস্কারের জন্য।
স্মিথের আশাবাদ, তার রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা – যার সাথে যুক্ত ছিলো বিধ্বংসী অনুপ্রেরণা, বিপদজনক মনোকামনা ও চাহিদার বোধ, নগ্ন ধোঁকা, নির্মম ট্রাজেডি এবং সবশেষে টিকে থাকা সীমাহীন আশাবাদ। তার অর্জিত অভিজ্ঞতা অন্যদের জন্য শিক্ষনীয় একটি পথ দেখাবে। সেইসব মানুষদের জন্য, যারা তার মতো অন্ধকার জগতের কোন প্রিন্স কিংবা প্রিন্সেসের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। স্মিথ আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে, হয়তো সে অন্য আরেকজন মানুষের জীবনের গল্পের প্লট পাল্টে দিতে সক্ষম হবে। যে মানুষটি অপরাধ জগতের গতিশীল ও বহুমাত্রিক মোহে নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে।
আমি এই পুরোটা জীবন ধরে একটি শিক্ষা পেয়েছি। ভালোবাসা কখনোই আপনাকে ভয় কিংবা ধ্বংসের পথে নিতে পারে না। যদি নিয়ে থাকে, তাহলে মনে রাখবেন, সেটা আদৌ কখনো ভালোবাসা ছিলো না।
# তথ্য সহায়তা ও ছবি
১। হাফিংটনপোস্ট
২। কেমবাস্মিথ ডট কম
৩। ইউটিউব
৪। কেমবা স্মিথ ফাউন্ডেশন
লেখাটি পার্থিব নামে একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছিলো। সাইটটি বন্ধ হওয়াতে লেখাটি ব্যক্তিগত ব্লগে পোস্ট করা হয়েছে। ফিচার ইমেজটি পুরনো লেখার সাথে পাবলিশ হয়েছিলো।