Hafizul Islam

শ্রাবণের রাতে সবজিবোঝাই ভ্যান, ঝুম বৃষ্টি এবং আমার প্রথম উপার্জন

বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে মৌচাক-মালিবাগ সড়ক। রাত তখন ১ টা থেকে ২টা। আমি হেঁটে বেড়াচ্ছি। ঘুরে ফিরছি। রাতের শহর আমার কাছে সবসময়ই অন্যরকম। ভালোলাগার। পড়নে লুঙ্গি আর গেঞ্জি। একটু আগে মালিবাগ পদ্মা সিনেমা হলের কাছে কয়েকজন ট্রাক-শ্রমিকের সাথে ফুটপাতে বসে চা খেয়েছি। হাত-পা ছড়িয়ে বসে গল্প করেছি। শুনেছি তাদের গল্প..। দূরের কোন ছোট্ট গায়ে রেখে আসা আদরের

রাতুলের কপোতাক্ষ নদ কিংবা সাধারণ একটি বাথটাবের গল্প

রাতুলের সাথে আমার প্রথম দেখা হয় জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির কলাভবনের পাশের রাস্তায়। ঝকঝকে চেহারার ছেলে। চোখের চশমা আর বড়ো ডায়ালের হাতঘড়িতে রীতিমতো স্মার্ট বলা চলে। জীবনের পথচলার ধরণ ভিন্ন হওয়ার কারনেই হয়তো খুব ঝকঝকে চেহারার মানুষদের সাথে আমার একটা অদ্ভূত দূরত্ব থাকে প্রথম থেকেই। কারণ, আমার মনে হয়, আমাকে বুঝতে পারার মতো সময় এবং মানসিকতা তাদের

টোকাই নীরবের গুপ্তধন এবং রঙচঙে মোড়কের রাজ্য

ভবেরচর বাজার রোডের একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলে ক্লাস ২ তে পড়তাম তখন। আমাদের স্কুল রাস্তার পাশেই। টিনশেডের একতলা ঘরে। গ্রামে তখনও কিন্ডারগার্টেন স্কুলের চল শুরু হয় নি। প্রতিদিনের যাতায়াত ছিলো খুব ছোট্ট একটা স্কুল ভ্যানে। গাদাগাদি করে বসতাম আমরা ৮/৯ জন। ভ্যান প্রায়ই আসতো না। তখন হেঁটে ফিরতে হতো বাড়িতে। সেই সময় থেকেই আমার মধ্যে একটা

একজন চন্দনা কিংবা কংক্রিট শহরের গল্প…পথলিপি

এখন অনেক রাত। দূর থেকে ভেসে আসছে রাতজাগা ডাহুকের আর্তরব। আমার জানালার পাশে দাঁড়ানো গাছটিতে, নীড়ে ফেরা কোন পাখিদের সামান্য আয়োজনের সংসার। আমি লিখছি কংক্রিটের শহর ঢাকা থেকে অনেক দূরের এক মফস্বল শহরের ছোট্ট এক বাড়িতে বসে। ঝিঁ ঝিঁ ডাকছে ঝিমধরানো শব্দে। পৃথিবী ঘুমোচ্ছে নিশ্চিন্তে আকাশের গায়ে মাথা রেখে…। সুগভীর রাত্রির অতলান্তিক নৈঃশব্দ, প্রগাঢ় নিস্তব্ধতায়

বৃষ্টি, ভালোবাসা , রূপকথা এবং একজন সপ্রতিভ কিশোরীর গল্প

আমার আকাশ আমি যতো ই হাজার অন্য রংয়ে আঁকি..
আকাশ সে তো নীল ই থেকে যায়…
আমার সাদা কালো শহর, সে তো সাদা কালো ই থাকে..
আমি যতোই রঙিন নিয়ন জ্বালাই..

রাতভর ঝুম বৃষ্টি হয়েছে। ভোরের রাস্তায় সুনসান নীরবতা। ভীষণ স্নিগ্ধ আর পবিত্র লাগছে আজকের সকালটা। আমার গল্পের লেখক, অর্ক রায়হান, তার লেখার একটা চরিত্র চিত্রায়ণ নিয়ে বিরক্ত হয়ে আছেন। কিছুত্রেই ফুঁটিয়ে তুলতে পারছেন না চরিত্রটিকে। রামপুরা বাজার হয়ে মালিবাগ রেলগেট, সেখান থেকে ফ্লাইওভারের পথে হাঁটছেন তিনি। চরিত্রটা বেশ জটিল। একজন হাস্যময়ী কিশোরীর চরিত্র।

লেখকের সাথে তার প্রথম দেখা হয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। কোন এক রোদজ্বলা নিঝ্ঝুম দুপুরে। ধরা যাক মেয়েটির নাম অনন্যা। শহরের নামী এক কলেজ থেকে পাশ করে বেরিয়েছে সম্প্রতি। চোখে রঙিন ভবিষ্যতের স্বপ্ন..। মেয়েটি তখন হাসছিলো নিঃশব্দে। দেখেই লেখকের মনে হয়েছিলো, জোৎস্নার ফুল ঝরে পড়ছে শব্দহীন মুখরতায়। কিছু মুখ থাকে এমন, তারার মতো ঝকঝকে। সহজে মুছে ফেলা যায় না স্মৃতি থেকে। বারবার নানা রঙ আর রূপ নিয়ে ফিরে ফিরে আসে।

অনন্যাও ঠিক তেমনই একজন। অনন্যার খুব ভালো লেগে যায় আমার গল্পের লেখককে। সপ্রতিভ ভঙ্গিতে নিজের ভালোলাগা জানিয়েও দেয় অনন্যা।  সম্পর্কটা সামনে এগিয়ে চলে। খুব ভালো বন্ধুত্ব তৈরী হয় তাদের মধ্যে। লেখক লিখেন। অনন্যা পড়তে শুরু করে। সময়ও কাটতে থাকে তার আপন নিয়মে।

একজন স্ট্রীট ম্যাজিশিয়ান ও রূপকথার জাদুকরের গল্প

জনারণ্যে খুঁজে ফিরি আপনার স্বজন…পথ-লিপি – ২

”দেহেন ভাই, আমার হাতে কয়ডা কার্ড? তিনডা? আমি দেখতাছি চাইরডা। বাইর কইরা দেহান তো…” এভাবেই ঢাকার নগরকর্তার বাড়ির সামনে, ওসমানী উদ্যানের লাগোয়া ফুটপাথের অনাড়ম্বর আর ধুলোমলিন স্টেজে ম্যাজিক দেখাচ্ছিলেন আমার শৈশবের স্বপ্নের জাদুকর হ্যারি হুডিনী। অবাক হলেন তো? অবাক হবারই কথা। বিশ্বের খ্যাতনামা ম্যাজিশিয়ান হুডিনীর কী প্রয়োজন হলো যে, তিনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে শো করবেন!
আমি আসলে গল্প বলছি। ছোট্ট এক কিশোরের গল্প। অশুদ্ধ বাংলায় কথা বলা এক ছোট্ট ম্যাজিশিয়ানের প্রতিদিনকার গল্প। যে জানে না, ম্যাজিক আমাদের সমাজে মনোরঞ্জনের উপকরণ। সে শুধু জানে, অন্তত কয়েকটা ম্যাজিকের সামগ্রী বিক্রি করতে না পারলে তার ছোট্ট বোনটি রাস্তার সস্তা হোটেলেও খেতে পাবে না।
অফিস ফেরৎ আমি দাঁড়ালাম ম্যাজিক দেখবো বলে। একটি শতচ্ছিন্ন ব্যাগে অল্প কিছু পুরোনো ম্যাজিকের উপকরণ, একটা প্লাস্টিকের বস্তা, একটা এনার্জি বাল্ব, মলিন কিছু ছেড়া পোশাক, ছোট্ট এক বোন নিয়েই তার সংসার। মা আছেন কোথাও কাজে। জানতে চাইলাম কী নাম তোমার? নাম দিয়া কাম কী? ট্যাকা দিবেন নাম কইলে? আমি অন্য প্রশ্ন করলাম। তিন কার্ডের খেলাটা কয় টাকা রাখবা? বললো ৫০ টাকা একদাম। বললাম, কার্ডতো পুরোনো হয়ে গেছে। ঝাঁজের সাথে উত্তর দিলো ছেলেটা, নিলে ন্যান, না নিলে রাস্তা মাপেন ভাই। এতো প্যাচালের তো দরকার নাই।

জনারণ্যে খুঁজে ফিরি আপনার স্বজন…পথ-লিপি – ১

ছবিটি প্রতিকী। মূল দোকানের ছবি উঠানো সম্ভব হয় নি। “ঐ মামা, একটা বার্গার দ্যান তো…” “কত হইছে ভাই..” “আরেকটু সস দিয়েন তো..” এটি একটি স্পেশাল বার্গারের দোকানের প্রতিমুহুর্তের কলরব..। স্পেশাল বলছি কেনো জানেন? এখানে বার্গার পাওয়া যায় মাত্র ১২ টাকায়! এই বিশেষ বার্গারের সাথে আপনার দেখা দামী এয়ারকন্ডিশনড দোকানের বার্গারের কোন মিল খুঁজে পাবেন না