Hafizul Islam

শত মুখোশের অন্য এক আমি

আমি হারিয়ে গেছি কোথায় এবং কখন জানতে পারি নি সেকথা.. এই কোলাহলের জাদুর শহর আমাকে বদলে দিয়েছে..। আসলেই কি তাই!   মুখোশোর পর মুখোশ জমছে চেহারার পরতে পরতে মুখের খোঁজ কোথায় মিলবে, জানো কি কেহ? সিটি কর্পোরেশনের মূর্দা বহিতে আমার নাম উঠে আছে বহুদিন মোড়ের রঙজ্বলা পোষ্টারসাঁটা ষ্টুডিওতে সেদিন গিয়েছিলাম পাসপোর্ট সাইজ ছবির জন্য ফিরতে

বাবার সবুজ ট্রাঙ্কভর্তি স্বপ্ন নিয়ে একদিন জাদুর শহরে আমি

ঢাকায় আমি পাকাপাকিভাবে বসবাস করতে আসি ২০০০ সালে। উদ্দেশ্য উন্নতমানের পড়াশোনা করে বাবা-মায়ের স্বপ্নপূরণ। ভবিষ্যতের কিছু একটা হয়ে তারপর ততোধিক সফল জীবন-যাপন। আমার ঢাকাযাত্রা উপলক্ষ্যে বাড়িতে তখন ব্যাপক তোড়-জোড় চলছে। গ্রামের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে আমাকে। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াই সারাদিন..। কেউ কিচ্ছু বলে না। নাওয়া-খাওয়ার রুটিন গেছে ভেঙে। যা ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা চাইলেই পেয়ে

৫০ টাকা মাসিক হাতখরচের দিনগুলোতে মেয়নেজ মাখানো বার্গার

এ্যলিফেন্ট রোডের একটি মোটামুটি মানের ছাত্রাবাসে  তখন আমি। শৈশব পেরিয়ে সবে কৈশোরের দ্বারপ্রান্তে..। লিফট ছাড়া বিল্ডিংয়ের সাত তলায় থাকি। কাছেপিঠে কোন বাড়ি না থাকার সুবাদে চারপাশের অনেকটা জুড়ে দৃষ্টি চলে। নিত্যকার কাজকর্ম-পড়াশোনার ফাঁকে যেটুকু সময় পেতাম, তার অনেকটা অংশ কাটতো , গরাদআঁটা জানালার ভেতর দিয়ে মুক্ত আকাশ আর জাদুর শহর ঢাকার স্কাইলাইন দেখে। বাবার ছোট্ট সরকারী

টোকাই নীরবের গুপ্তধন এবং রঙচঙে মোড়কের রাজ্য

ভবেরচর বাজার রোডের একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলে ক্লাস ২ তে পড়তাম তখন। আমাদের স্কুল রাস্তার পাশেই। টিনশেডের একতলা ঘরে। গ্রামে তখনও কিন্ডারগার্টেন স্কুলের চল শুরু হয় নি। প্রতিদিনের যাতায়াত ছিলো খুব ছোট্ট একটা স্কুল ভ্যানে। গাদাগাদি করে বসতাম আমরা ৮/৯ জন। ভ্যান প্রায়ই আসতো না। তখন হেঁটে ফিরতে হতো বাড়িতে। সেই সময় থেকেই আমার মধ্যে একটা

পাহাড়ি রাজকন্যা এবং চন্দনের ঘ্রাণমাখা কোন এক বিকেল

সময়টা বহুদিন আগের। আমি তখন উড়ে বেড়াচ্ছি ভোকাট্টা ঘুড়ি হয়ে। ককসবাজারে অফ সিজন চলছে। অসম্ভব রকমের মানসিক চাপ নিয়ে ঢাকা ছেড়েছিলাম সেইবার। সাথে ২ রুমমেট। কোন একবিকেলে বার্মিজ মার্কেটে গিয়েছি।  হাঁটা এবং দেখা, এর দুটোই ফ্রি বলেই হয়তো  ঘুরে ফিরে দেখছিলাম। পকেটে অগ্রীম কেটে নেয়া ফিরতি-টিকেট ছাড়া একটা সিকি-আধুলিও নেই। খাওয়া-দাওয়া চলছে রুটি-কলা-বিস্কিটের উপর। থাকছি সস্তার

এই শহরে এখন আর অতিন্দ্রীলারা থাকে না

এই শহরে এখন আর অতিন্দ্রীলারা থাকে না..
শাখারীবাজারের মোড়েও আর  পিপলুদাকে
দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি না…।
হয়তো ওরা ভালো আছে অন্যকোথাও..।
অন্য চেহারা, অন্য নাম আর অন্য মানুষ হয়..
আমাদের ভিড়ে..

অতিন্দ্রীলাকে দেখেছিলাম প্রথম
কলেজিয়েট হাইস্কুলে, কোন এক শরতের সকালে
বিউটির লাচ্ছি, স্টীমারের হুইসেল, ঘোড়ার গাড়ির টুনটুন
সব কিছু মুছে গেয়েছিলে সেদিন..

জাদুর শহরে সুপ্রাচীন মানবের জন্য প্রতিক্ষা

সকাল থেকে রাতভোর অবধি তিলোত্তমা এই শহরে
একজন মানুষের খোঁজে পথ হাঁটেন অচেনা দেবদূত..
ঠাসবুনোনের এই নাগরিক কংক্রিট জঞ্জালে
কোন একজন মানুষের দেখা নেই ?

গ্রীক পুরাণের দেবতা জিউস কিংবা রামায়ণের কোন সন্ন্যাসীর
অভিশাপে পাথর হয়ে গেছে এই শহরের মানুষেরা?
নাকি, হ্যামিলিয়নের সেই হারানো বাশীওয়ালা
আবার এসেছে নেমে এই যাদুর শহরে..?

“নগরীর বাতাসে এখন ঘাম আর মেকাপের গন্ধ।
সাথে আছে, যানজটে বসে থেকে হেলপারের হাঁকডাক:
এই, শাবাগ, গুলিস্তা, ফারামগেট, মতেঝিল।
ড্রাইভার গুলো যেন একেকজন মিউজিক কম্পোজার!”

নাগরিক মেঘপিয়ন এবং তাহাদের ফটোগ্রাফ

শ্রাবণের আকাশ নাকি বিক্রি হয়ে গেছে!
জানিয়ে গেলো নাগরিক মেঘপিয়ন
বর্ষামঙ্গলের চিরকূট পাঠিয়েছিলাম তোমায়
পেয়েছো কি অবন্তিকা?

পলাশী-নীলখেত কিংবা ছবিরহাটের ফুটপাথে জমে উঠা জলে
কাগজের নৌকা ভাসানোর নিমন্ত্রণ তোমায়
আসবে কি বালিকা?

মেঘদল পথ হারিয়েছে এই নাগরিক বর্ষায়
আকাশ আজকাল কোথায় থাকছে
জানো কি তুমি?